পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৪৪

অনুরোধ করেছিলুম,—তুমি যেতে রাজী হওনি, আমরা থানায় গিয়ে তাঁকে দেখাব।

 কাগজ কলম আমরা দিলাম। মেয়েটি মেঝের ওপর বসে চিঠি লিখতে লাগল। ওর সুগৌর হাত দুটির ওপর সেই সময় ভালো ক’রে চোখ পড়তে দেখি এক জোড়া রাঙা কড় ও নোয়া ছাড়া এমন সুশ্রী সুডৌল হাতে আর কিছু নেই।

 আরও কষ্ট হ’ল ঘরের মেঝের অবস্থা দেখে। কি বিশ্রী সেঁতসেঁতে মেঝে, সপসপ করছে ভিজে। সদা-সর্বদা যেন জল উঠছে। এই মেঝের ওপর বিনা খাটে শোয় কি করে এ আমার বুদ্ধির অতীত। অত্যন্ত সুস্থ লোকও তিন দিন এ রকমের শুধু মেঝের ওপর যদি শুয়ে থাকে, সে নিশ্চয়ই একটা কঠিন অসুখে পড়বে।

 কথাটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অবাক্ হ’য়ে চেয়ে দেখি—মেয়েটি মুখ নিচু কবে, পা ছড়িয়ে মেয়েলি ধরনে বাঁ-হাতের কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে একদিকে কাত হ’য়ে বসে চিঠি লিখছে আর তার ডাগর চোখ দুটি বেয়ে টস্ টস্ করে জল পড়ছে, দু’ এক ফোঁটা জল চিঠির ওপরও পড়ল।

 পুলিশের চাকুরিতে মন বেশ একটু কঠিন হ’য়ে গিয়েছিল বটে, তবু মেয়েটির নিঃশব্দে কান্না দেখে, ওব সংসারের এই নগ্ন দারিদ্র্য, নিরাভরণ ওই হাত দু’টি, এই সেঁতসেঁতে ঘরের মেঝে, ভাঙ্গা আয়নাখানা, ওই ধুকড়ি লেপ কাঁথা দেখে, তার ওপর ওর গাঁজাখোর মূর্খ স্বামীর কথা মনে হয়ে—না মশাই আপনারা বললে বিশ্বাস করবেন না—সুরটা নরম করেই বললুম—এ তো মাকে চিঠি লিখতেই তোমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। তবে কেন চলনা, তাঁর সঙ্গে?