পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৫
রামশরণ দারোগার গল্প 

 আমার সহানুভূতির সুর বোধ হয় ওর হৃদয় স্পর্শ করলে, বললে, সেখানে এর চেয়েও কষ্ট।

 ওর সেই দৃষ্টিতে হতাশা, ঔদাসীন্য, মরীয়াভাব—সব একসঙ্গে জড়ানো।

 অবাক হ'য়ে বললুম—এর চেয়েও কষ্ট! এর চেয়ে আর কি কষ্ট থাকতে পারে?

 মেয়েটি শান্ত, স্থির সুরে বললে—আপনি সব কথা জানেন না, বললুম যে আরও অনেক কথা আছে এর মধ্যে! সে সব কথা বলতে চাইনে। মাকে আমার প্রণাম জানাবেন আর বলবেন, তোমার মেয়ে মরেচে আর তার খোঁজ কোরো না—

 কথাটার শেষের দিকে রুদ্ধ-কান্নায় ওর গলার সুর আটকে গেল। আমিও চিঠিখানা নিয়ে সে স্থান ত্যাগ করলুম। পথে দেখি পূজারী-ঠাকুর একটা শালপাতার ঠোঙা হাতে আসছে, আমাদের দেখে দাঁত বার করে বললে—'হেঁ হেঁ, কি হ'ল দারোগাবাবু? যা বলেছি, তাই হ'ল কিনা? তা এখুনি চললেন যে......? একটু যৎসামান্য মিষ্টিমুখ—'

 ওর ওপর রাগ কি হিংসে—কি হ'ল জানিনে। তার সে সব আপ্যায়িতের কথা রূঢ়ভাবে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বললুম—ওসব থাক্। একটা কথা বলি শোন ঠাকুর, কাল থানায় যেয়ো সকাল বেলা। একটা তক্তাপোশ সস্তায় নীলাম হবে। দাম তুমি যখন হয় দিও, কাল গিয়ে নিয়ে এসে সেখানা। বুঝলে?

 পূজারী-ঠাকুর অবিশ্যি নিজের কাজ ভোলনি। পরদিন সকালে এসে খাটখানা নিয়ে গিয়েছিল। এই খানেই আমার গল্পের শেষ।