পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৫৪

চেহারায় দুঃখের কোন চিহ্ন দেখিলাম না, তেমনই হাসি-হাসি মুখ, মুখশ্রী তেমনি সুকুমার, বিদ্যুতের মতো রং এতটুকু ম্লান হয় নাই। কি স্নেহ ও আদরের দৃষ্টি তাঁর চোখে, আমি পায়ের ধূলা লইয়া প্রণাম করিতেই তিনি আমার চিবুকে হাত দিয়া হাসিমুখে বলিলেন—এই যে পাবু, কেমন আছ? একটু রোগা দেখছি যে!

 আমি উত্তরে হাসিয়া খুড়ীমার সামনে মেজের উপরে বসিয়া পড়িলাম। বলিলাম—আপনি ভালো ছিলেন খুড়ীমা?

 খুড়ীমা বলিলেন—আমার আর ভালো থাকাথাকি, তুমিও যেমন পাবু!

 পরেশ-কাকা পাগল হইয়াছেন সে-কথা ভাবিয়া খুড়ীমার জন্য দুঃখ হইল। অভাগিনী খুড়ীমা!

 খুড়ীমা বলিলেন—কাছে সরে এসে ব’সো পাবু। পারু আমাকে বড় ভালোবাস—না? ঘাড় নাড়িয়া স্বীকার করিলাম খুব ভালোবাসি।

 —আমিও কলকাতায় থাকতে পাবুর কথা বড় ভাবি! পাবু, এ গাঁয়ে তোর মতো ভালোবাসে না কেউ আমায়।

 লজ্জায় রাঙা হইয়া হাসিমুখে চুপ করিয়া থাকিতাম। তেরো বছরের ছেলে কি কথাই বা জানি!

 —কলকাতা দেখেছ পাবু?

 —না, কে নিয়ে যাবে?

 — আচ্ছা, এবার আমি যখন যাব এখান থেকে, নিয়ে যাব সঙ্গে ক’রে। বেশ আমাদের বাড়ি গিয়ে থাকবে, কেমন ত?

 যাবেন খুড়ীমা? শ্রাবণ মাসে? না, এখন কিছুদিন থাকুন এখানে। যাবেন না এখন।