পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বায়ুরোগ

 হাঁসখালি থেকে গোয়াড়ী কৃষ্ণনগর পর্যন্ত যে রাস্তা চলে গিয়েছে, ঐ রাস্তা বেয়ে যাচ্ছিলুম আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি। বগুলা স্টেশনে নেমে সোজা পাকা রাস্তা। দুপুরের পর একাই হেঁটে চলেছি, পথে বড় একটা লোকজন নেই, বৃষ্টির দিন, আকাশ মেঘান্ধকার, জোলো হাওয়া বইছে, রাস্তার দু’ধারের বড় বড় গাছ থেকে টুপটাপ জল পড়ছে, দিনটা ঠাণ্ডা, রাস্তা হাঁটবার পক্ষে উপযুক্ত দিন বটে।

 ডোমচিতি, গোয়ালবাগি ছাড়িয়েছি। রাস্তার দু’ধারে ঘন ঘন বাগান। আরও আট-দশ মাইল রাস্তা যেতে হবে। একটা বাঁধানো সাঁকোর ওপর বিশ্রাম করব বলে বসেছি, এমন সময় আর একজন পথ-চল্‌তি লোক এসে আমার সামনের সাঁকোটাতে বসল। খানিকটা বসে সে আমার দিকে একবার চাইলে, তারপর একটু সঙ্কোচের সুরে বলে—বাবু, আপনার কাছে দেশলাই আছে? তারপর দেশলাই নিয়ে বললে—আমার সঙ্গে তামাক আছে, হুঁকো কলকেও আছে। একটু তামাক সাজব, খাবেন?

 বললুম—না দরকার নেই। আমি—

 লোকটা যেন একটু দুঃখিত হ’ল। বললে—না কেন বাবু, খান না? আমি সেজে দিচ্ছি। এমন সুরে বললে যে, আমার জন্যে তামাক না সাজতে পেয়ে তার মনে যেন সুখ নেই। একটু অবাক্ হয়ে চেয়ে দেখলুম ওর দিকে, চিনিনে শুনিনে