পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭
বায়ুরোগ 

 খেতে বসে আমি বুঝলুম লোকটা পাকা রাঁধুনী। পাকা রাঁধুনী বললে সবটা বলা হ’ল না। রান্নার কাজে সে একজন শিল্পী। উঁচুদরের প্রতিভাবান শিল্পী। সত্যিই অবাক্ হয়ে গেলাম তার রান্না খেয়ে।

 বললাম—কোথায় শিখলে হে এমন চমৎকার রান্না?

 ও বললে—কেউ শেখায় নি, এমনি হয়েচে।

 —তুমি কলকাতায় কি অন্য কোথাও মোটা মাইনের চাকুরি পেতে পারো হে, রান্নার কাজে। ধরো কোনো বড়লোকের বাড়িতে। এরকম ক’রে বেড়াও কেন?

 সে হেসে বললে—তাও করেচি। কিন্তু আমার একটা বাতিক আছে বাবু। সেজন্যে আর কোথাও চাকরি স্বীকার করতে ইচ্ছে হয় না। সে কথাটা খুলে বলি তবে। সেটাকে একরকম রোগও বলতে পারেন। হয়তো বা বায়ুরোগ।

 আমি ম্যাট্রিক পাস করে ভেবেছিলুম আরও পড়বো, কিন্তু অবস্থা খারাপ ছিল ব’লে পড়ার খরচ চালানো গেল না, সুতরাং ছেড়ে দিতে হ’ল।

 তারপর চাকরির সন্ধানে বেরুই। সিংভূম জেলার একটা পাহাড় ও জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় খনিসংক্রান্ত কি জরীপ হচ্চে। ঘুরতে ঘুরতে সেখানে গিয়ে জুটলাম। মস্ত বড় মাঠে অনেকগুলো তাঁবু পড়েছে, অনেক লোক। আমি একজন ওভারসিয়ারের তাঁবুতে রাঁধুনীর কাজ পেয়ে গেলাম। লোকটির বয়েস চল্লিশের ওপর হবে। একাই থাকে, একটা ছোকরা চাকর ছিল, আমি যাবার পরে তাকে জবাব দিয়ে দিলে।

 কিছুদিন সেখানে কাজ করবার পর মনিবের প্রতি আমার একটা অদ্ভুত ধরনের ভালোবাসা লক্ষ্য করলুম। কিসে সে