পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৭০

আমার হাত থেকে তেলের বোতল প’ড়ে চুরমার হয়ে গেল। মারের চোটে ও অপমানে কান লাল হয়ে উঠল। সেখানে বসে পড়লুম এবং অনেকক্ষণ শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে বসে রইলুম।

 কিন্তু শুনলে আপনি আশ্চর্য হবেন এবং আমিও তখন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলুম যে, মনিবের ওপর রাগের পরিবর্তে আমার উল্টে একটা করুণার উদ্রেক হ’ল। ভাবলুম—আহা, লোকটা জানে না যে, ওর নিজের দোষে এবার আমি হাতঝাড়া হয়ে যেতে বসেচি। হেড্ কানুনগোর তাঁবুতে খবর পাঠাবার অপেক্ষা মাত্র। কানুনগোর সঙ্গে যে আমার মনিবের সদ্ভাব নেই, তাও সবাই জানে। খেও কাল থেকে হাত পুড়িয়ে রেঁধে—এখানে আর বাঙ্গালী রাঁধুনী মিলছে না।

 এই কথা যতই ভাবি, ততই ওর উপর করুণা ও অনুকম্পা গভীর হয়ে উঠে। সে এক অপূর্ব অনুভূতি! ভগবান আমার বুকে এসে যেন তাঁর আসন পেতেছেন। ওকে আমি ছেড়ে গেলে ওর কত কষ্ট হবে এবং বিশেষ ক’রে লোকটা কি বোকাই বনে যাবে—এই ভেবেই আমার মন গলে গেল। নিজের অপমান ভুলেই গেলাম একেবারে।

 রাত আটটা যখন বেজেচে, তখন আমি উঠে গিয়ে রান্না চড়িয়ে দিলুম। তার আগেই ঠিক করে ফেলেচি আমি মনিবকে ছেড়ে কোথাও যাব না।

 ঘোড়ার সইস্‌টা কিন্তু আড়াল থেকে আমার মার খাওয়াটা দেখেছিল। সে গিয়ে সবাইকে গল্প করেছে। ফলে সকাল থেকে এক হেড্ কামুনগোর কাছ থেকেই আমার কাছে পাঁচবার লোক এলো আমায় ভাঙিয়ে নিতে।