বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জন্ম ও মৃত্যু
৭২

রাস্কেল, তুই চুরি ক’রে রেখেছিলি বোতাম তোর বাক্সে। এই বলেই মার। কিন্তু হুজুর বাস্তবিক আমি চুরির মতলবে—

 কানুনগোর মুখের ভাব ক্রমশ পরিবর্তন হতে লাগল, ঘুঘু লোক, বেশ বুঝলেন আমি চুরির মতলবেই সোনার বোতাম তোরঙ্গে রেখেছিলুম। এমন লোককে কে বাসায় স্থান দেবে? তিনি ‘হুঁ’, ‘হাঁ’, ‘তা বটে’ বলতে বলতে সরে পড়লেন।

 চতুর্দিকে রাষ্ট্র হয়ে গেল দু’একদিনের মধ্যেই, যে আমি মনিবের সোনার বোতাম লুকিয়ে রেখেছিলুম, তাই ধর। পড়াতে মার খেয়েছি। আর আমায় কেউ ভাঙ্‌চি দিতে আসে না। জেনে শুনে চোরকে কে কাছে রাখতে চায়?

 মনিব একদিন আমায় বললে—এ কি শুনচি? তুমি কানুনগো বাবুর কাছে বলেচ সোনার বোতাম লুকিয়ে রেখেছিলে বলে তোমায় মেরেছিলুম সেদিন? কেন এ কথা বললে?

 বললুম সবকথা খুলে। ওরা ভাঙ্‌চি দিতে আসে, বিরক্ত করে সর্বদা, না ব’লে উপায় কি? ও কথা না বললে কি আমার নিস্তার ছিল?

 মনিব বললেন—তুমি অদ্ভুত লোক। এমন লোক আমি কখনো দেখিনি। আমায় ছেড়ে যেতে হবে বলে নিজের নামে নিজেই একটা মিথ্যে অপবাদ রটালে? এ তো নিজের ভাই করে না, ছেলে করে না। তুমি রাঁধুনীর কাজ কোরো না, সাধারণ লোক নও তুমি। তোমাকে রাঁধুনী করে রেখে দিলে আমার অপরাধ হবে।

 তিনি যদিও সবাইকে বলে বেড়ালেন বোতাম চুরির কথা সর্বৈব মিথ্যে, কিন্তু সে কথা কেউ বিশ্বাস করলে না। মনিবকে