পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

৸৶৹

স্বাজাত্যবাদ ও শক্তিবাদকে সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী করিয়া, তিনি ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামকে যে পথে প্রবর্ত্তিত করিলেন তাহাতে বাঙালীর স্থান আর রহিল না—সঙ্গে সঙ্গে সেই জীবন-বাদ, সেই শক্তিবাদ, সেই মহাভারতীয় হিন্দুধর্ম্মও পুনরায় মধ্যযুগীয় আধ্যাত্মিকতা ও ক্লীববৈরাগ্যের দ্বারা আচ্ছন্ন বা নিরাকৃত হইয়া গেল। এখানে এ সময়ে অধিক বলিবার স্থান নাই―ভুমিকা দীর্ঘ হইয়া পড়িতেছে। এ সম্বন্ধে আমি অন্যত্র বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছি।[১] এখানে আমি কেবল ইহাই বলিতে চাই যে, নেতাজী সুভাষচন্দ্রেই সেই বাঙালী-ধর্ম্ম ও বাঙালী-প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ হইয়াছে, তিনিই নবযুগের মানব-ধর্ম্মকে স্বাভাবিক ও সার্ব্বজনীন ভিত্তির উপরে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করিয়া, শুধুই ভারতের হিন্দুকে নয়, মুসলমানকেও, মুক্তির পথ দেখাইয়াছেন। এই বাংলাদেশে বাঙালীই সে পথের সন্ধান করিয়াছে―সেই যে “দুর্গং পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি,” তাহাকে সুগম করিয়াছে, এবং সারা ভারতকে সেই পথে চলিতে আহ্বান করিয়াছে। গান্ধীধর্ম্ম মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ বলিয়া―বরং তাহা প্রকৃতি সম্বন্ধে নাস্তিক, এবং একরূপ অধ্যাত্মবাদে অন্ধবিশ্বাসী বলিয়া, হিন্দু মুসলমান কাহারও ধর্ম্ম হইতে পারে না; সেই ধর্ম্ম যেমন যুগোচিত নয়, তেমনিই তাহার অন্তর্নিহিত তত্ত্ব সমন্বয়বিমুখ বলিয়া―সত্যও নহে। সুভাষচন্দ্রও, বিবেকানন্দের মত, কেবল বাংলার কথাই ভাবেন নাই; তিনি ভারতের সর্ব্বপ্রদেশ, সর্ব্বজাতি ও সর্ব্বসম্প্রদায়কে এক গভীর ও উদার স্বাজাত্যবোধের দ্বারা―সমগৌরব-বোধের দ্বারা (পাপমোচন বা হরিজনসেবা দ্বারা নয়), সত্যকার আত্মীয়তা-বন্ধনে বাঁধিতে চাহিয়াছিলেন। এই মুক্তির


  1. লেখকের ‘বঙ্কিম-বরণ’ গ্রন্থের শেষ প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।