পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পরিশিষ্ট
১৬৫

না। সাধারণ মানুষের পক্ষে ইহা সহজ নয়। সৌভাগ্যক্রমে এমন দুই একজন মানুষ থাকেই যাহারা জনগণের ঐ চেতনার সহিত নিজেদের ব্যক্তি-চেতনা সহজেই মিলাইয়া লইতে পারে, এবং সেই হেতু তাহারা জনমনের গতি ও প্রকৃতি ঠিকমত উপলব্ধি করিতে পারে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হইতেই জানি যে, যে-নেতা এই জন-চিত্তকে যত অধিক বুঝিতে সক্ষম হইযাছেন তিনি তত অধিক শক্তি ও সাফল্যের অধিকারী হইয়াছেন। জন-চিত্তের সহিত এইরূপ যােগ-স্থাপন কেবল বুদ্ধির আয়ও নহে, ইহার জন্য সেই অন্তঃশীলা বোধ-বৃত্তি চাই।

 নেতার সেই মনকে এমন শুদ্ধ ও সংযত করা সম্ভব, যাহাতে গণ-চিত্তের সঙ্গে উহা একসুরে বাঁধা হইয়া যায়। কিন্তু ইহার জন্য অবিরাম সাধনা ও সতর্কতা চাই। মনে কর, পর্ব্বত-বন্ধ পথে একটা জলস্রোত প্রবলবেগে নির্গত হইতেছে, উহার অন্তর্গত প্রত্যেকটি জলকণা কি ঐ প্রপাতের সঙ্গে একই বেগে একই ছন্দে বহিতেছে না? বের্গসঁ-র (Bergson) সেই ‘জীবনাত্মিকা অনাদ্যন্ত গতিধারা’র (Elan Vital) কথা চিন্তা কর, মানুষের চিৎ-সত্তা কি সেই বিশুদ্ধ ‘সৎ'―(সই গতি-সত্তার মধ্যে অবতরণ করিয়া তাহাকে আত্মসাৎ করিতে পারে না? হেগেলের (Hegel) সেই অদ্বিতীয় ‘মহা-তত্ত্ব’ (Absolute Idea) যাহা সৃষ্টির পর্ব্বে পর্ব্বে অভিব্যক্ত হইতেছে―মানুষের ব্যক্তি-চেতনা কি সই তত্ত্বে নিমজ্জিত হইয়া তাহার সহিত এক হইয়া যাইতে পারে না? অথবা, আমাদের তন্ত্রের সেই এক ‘পরমা শক্তি’―যাহার নিত্য-নব রূপান্তর এই জগৎ, ―মানুষের আত্মা কি ভাব-যােগে সেই শক্তিকে হৃদগত করিতে পারে না?

 সেইরূপ, গণ-চিত্তের সহিত ব্যক্তি-মানসের যােগসাধনও সম্ভব;