পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
স্বামীজী ও নেতাজী
২১

একরূপে ও আর এক মাত্রায় এই বেদনা জাগিয়াছিল, তাঁহার সেই বেদনাও কেহ বুঝে নাই। তিনি ছিলেন কবি, সেই বেদনাকে তিনি তাঁহার হৃদয়স্রুত শোণিতধারায় লেখনীমুখে মুক্তি দিয়াছিলেন। বাঙালী তাহার রস আস্বাদন করিয়াছিল―সে বেদনা বুঝে নাই। আমি বঙ্কিমচন্দ্রের কথা বলিতেছি; বঙ্কিমচন্দ্র ‘ধূঁয়ার ছলনা করিয়া’ কাঁদিয়াছিলেন, সে-কান্না তখন কেহ বিশ্বাস করে নাই। স্বামীজীর বেদনা আরও গভীর, আরও বাস্তব তাহার কারণ, তাঁহার দৃষ্টি―ঊর্দ্ধেও যতদূর, নিম্নেও ততদূর প্রসারিত ছিল; তিনি মানবাত্মার মুক্তিকেও যেমন, তাহার বন্ধনকেও তেমনি আত্মগোচর করিয়াছিলেন। এজন্য সেই বন্ধন তাঁহার যেমন অসহ্য হইয়াছিল এমন আর কাহারও হয় নাই। কোন্ দেশের কোন্ সমাজে তিনি মানুষের চরম দুর্গতিকে প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন? পৃথিবীর আর সকল দেশে তিনি মানবাত্মার মহিমা ঘোষণা করিতেন, কিন্তু নিজের দেশে আসিয়া তিনি নির্ব্বাক হইয়া যাইতেন, অশ্রুবাষ্পে কণ্ঠ রুদ্ধ হইয়া যাইত। যেন ভারতের অভিশপ্ত দেহে ভারতেরই সেই গর্ব্বোদ্ধত আত্মা―সেই “বেদান্তকৃৎ বেদবিদেব চাহম্”—আর্ত্তনাদ করিয়া উঠিত,সর্ব্বত্যাগী সন্ন্যাসী-ভারত যোগাসনে স্থির থাকিতে পারিত না! কিন্তু স্বামীজীর সে যাতনা রোদনরবে উচ্ছ্বসিত হয় নাই; সেই অশ্রুকেও নিরুদ্ধ করিয়া, সেই বিষকে কণ্ঠে ধারণ করিয়া, সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ এই মৃতকল্প জাতির শিয়রে জাগিয়া রহিলেন, এবং তাহার বক্ষে ও বাহুতে বলাধান করিবার জন্য, কর্ণে