পাতা:জল খাবার - কিরণলেখা রায়.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জল খাবায় : ১৮

রাখিতে হয়। এই প্রকারে সংগৃহীত বালুকা পুনরায় ভাজন হাঁড়িতে দিয়া উত্তপ্ত করিয়া পুনঃ পুনঃ শস্য ভাজা যায়। বালুকা যথেষ্ট উত্তপ্ত হইয়াছে কি না পরীক্ষা করিতে একখানি বংশ শলাকার প্রয়ােজন হয়। যদ্যপি ঐ বংশ শলাকার ডগা উত্তপ্ত বালুকার মধ্যে প্রবিষ্ট করিয়া দিলে তাহা উপযুক্তরূপেনা ধুঁয়ায় তবে বুঝিতে হইবে বালু তখনও যথেষ্ট তাতে নাই। আর যদি তাহা জ্বলিয়া উঠে তাহা হইলে বুঝিতে হইবে বালু অতিরিক্ত তাতিয়া গিয়াছে তখন হাঁড়ি সমেত বালুকা জ্বাল হইতে নামাইয়া ঠাণ্ডা করিয়া লইতে হইবে। বালুকা অতিরিক্ত ভাবে তাতিলে তাহাতে শস্য ছাড়িলে তাহা ‘তাতিয়া’ (আঁখিয়া) অর্থাৎ পুড়িয়া যাইবে। আবার বালু কম তাতিয়া থাকিলে তাহাতে শস্য ছড়িলে তাহা আদৌ চট্‌চটা শব্দে ভৃষ্ট হইয়া ফাঁপিয়া উঠিবে না। উত্তপ্ত বালুর উপর শসা ছাড়িয়া নাড়িবার নিমিত্ত বাঁশ চাঁচিয়া একফুট পরিমিত দীর্ঘ নাতিসরু এক সূতা ১/৮” পরিমিত পুরু কতকগুলি খিল বা কাটি বানাইয়া লইয়া গােছা করিয়া তাহার মধ্যস্থল একটুকরা সরু পাটের দড়ির দ্বারা উত্তমরূপে আঁটিয়া বাঁধিয়া লইতে হয়, ইহাকে ‘কুচি’(কুর্চ্চিকা) কহে। উক্তরূপে পরীক্ষিত উত্তপ্ত বালুর উপর বালুর আন্দাজে শস্য ছাড়িয়া প্রথমে কূচির দ্বারা এক বার নাড়িয়া লইবার পর লৌহ ‘বেড়ী’র সাহায্যে হাঁড়ির ‘গলা’ ধরিয়া তুলিয়া একবার ঝাঁকনি দিয়া শস্যগুলি বালুর ভিতরে প্রবিষ্ট করাইয়া দিয়া ধীরে ধীরে হাঁড়ি ঘুরাইতে (ঢুলাইতে) হয়, তাহা হইলে উত্তপ্ত বালুকা শস্যের সহিত ঘনিষ্টভাবে (intimately) মিশিয়া যাইয়া তাহাদিগকে সমভাবে evenly) ভর্জ্জিত করিবে।নচেৎ কোন কোন শস্য-পানা আদৌ সৃষ্ট হইবেনা, কেহবা উপযুক্তভাবে ভৃষ্ট হইবে, আবার কোন কোন দানা বা তাতিয়া পুড়িয়া যাইবে। কুচির আরও কাজ আছে-তপ্ত বালুকা সহ ভষ্ট শসা যখন ভাজন হাঁড়ি হইতে ঝাঁঝর হাঁড়িতে ঢলিয়া ফেলা হয় তখন ঐ উহারই সাহায্য নাড়িয়া ভৃষ্ট শস্য হইতে তপ্ত বালু পৃথক করিয়া ফেলিতে হয়, অর্থাৎ কুচির দ্বারা নাড়িলে বালুকাগুলি ঝাঁঝরের ছিদ্র পথে নিচে পড়িয়া যায় এবং শস্যগুলি তখন নির্বালুকা হইয়া ঝাঁঝবের মধ্যে রহিয়া যায়। এইবারে পুনঃ ‘কুলার’ প্রয়ােজন, কুলার সাহায্যে শেষ পর্যন্ত ভৃষ্ট শস্যকে তুষ ও বালুর লেশ হইতে ঝাড়িয়া লইতে হয়। কিন্তু কেবল ইহাতে কলাই প্রভৃতির তুষ দূর হয় না। ভৃষ্ট কলাই অপেক্ষাকৃত লঘু ‘কলাই-ভাঙ্গা-জাঁতা’তে ফেলিয়া ঘুরাইয়া খােসা হইতে পৃথক করিয়া ফেলিতে হয়। ইহাতে অবশ্য ভৃষ্ট কলাইগুলি বিদল হইয়া যায়। অতঃপর পুনঃ ‘কুলায়’ ঝাড়িয়া দাল হইতে খােসা ঝাড়িয়া ফেলিতে হয়। ধানের বা ভুট্টার যাহার খই ভাজিলে বড় বড় হয় তাহা নির্ব্বালুকা করিবার ব্যবস্থা একটু পৃথক। উহাদের খইগুলি বৃহদাকার বলিয়া তাহা আর ক্ষুদ্র মৃৎ-ঝাঁঝরে না ঢালিয়া বংশ-বাতা নির্ম্মিত বৃহদাকার ‘খই-চালায়’ ফেলিয়া