পাতা:জাতক (প্রথম খণ্ড) - ঈশানচন্দ্র ঘোষ.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯৬-তৈলপাত্র-জাতক । “যাহাই হউক না কেন, কুমার, আমি আর অগ্রসর হইতে পারিতেছি না।” “অ্যােচ্ছ, এখনই দেখা যাইবে তুমি কেমন লোক।” ইহা বলিয়া বোধিসত্ত্ব অন্য চারিজন অনুচরের সহিত চলিতে লাগিলেন । 曦 এদিকে সেই রূপপ্রিয় ব্যক্তি ব্যক্ষিণীদিগের নিকট উপস্থিত হইল ; কিন্তু সে যেমন তাহাদের সহিত পাপাচারে প্রবৃত্ত হইল, অমনি তাহারা হতভাগ্যের প্রাণসংহার করিয়া বোধিসত্বের পুরোভাগে অপর এক পান্থশালা নিৰ্ম্মাণ করিল এবং সেখানে নানাবিধ বাদ্যযন্ত্রসংযোগে গান আরম্ভ করিল। সেখানে শব্দমাধুৰ্য্যপ্রিয় ব্যক্তি পশ্চাদবৰ্ত্তী হইয়া পড়িয়া নিহত ও খাদিত হইল। ইহার পর যক্ষিণীরা আবার পুরোভাগে গিয়া নানাবিধগন্ধকরণ্ডপূর্ণ দোকান সাজাইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল এবং সেখানে সৌরভপ্রিয় ব্যক্তি পশ্চাতে পড়িয়া গেল। যক্ষিণীরা তাহাকেও খাইয়া পুনর্বার পুরোভাগে গিয়া দিব্যৱসযুক্তভোজ্যপরিপূর্ণ বহুপাত্র দ্বারা দোকান সাজাইল। সেখানে সুরসপ্রিয় বু্যক্তি পশ্চাতে পড়িয়া রহিল এবং যক্ষিণীদিগের উদারস্থ হইল । সর্বশেষে যক্ষিণীরা আবার পুরোভাগে গিয়া দিব্য শষ্য রচনা করিয়া অপেক্ষা করিতে লাগিল। সেখানে স্পর্শমুখপ্রিয় ব্যক্তি পশ্চাতে পড়িয়া গেল এবং যক্ষিণীরা তাহাকেও 6ङाक्कका कद्विव्ा । তখন এক বোধিসত্ত্ব জীবিত রহিলেন এবং একজন ব্যক্ষিণী তঁাহার অনুসরণ করিতে লাগিল। সে মনে মনে ভাবিল, “এ ব্যক্তি যতই দৃঢ়চেতা হউক না কেন, আমি ইহাকে না। খাইয়া ফিরিতেছি না। ’ বনের এক অংশে বনচরেরা কাজ করিতেছিল। তাহারা যক্ষিণীকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ওগো, ঐ যে তোমার আগে আগে পুরুষটী शांझेंड्छ, ७ ८ङांभांद्र কে ?” ব্যক্ষিণী কহিল, “মহাশয়গণ, উনি আমার স্বামী।” ” ইহা শুনিয়া বনচরেরা বোধিসত্বকে সম্বোধনপূর্বক বলিল, “ওগো মহাশয়, এমন পুষ্পদামসদৃশী” তপ্তকাঞ্চনবৰ্ণাভ সুকুমারী তোমার জন্য পিতৃকুল পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছে, আর তোমার এমনই কঠিন হৃদয় যে যাহাতে এ বেচারি সুখ স্বচ্ছন্দে তোমার সঙ্গে যাইতে পারে তাহা করিতেছি না ! ( তুমি ইহাকে পশ্চাতে ফেলিয়াই ছুটিয়াছ! )” বোধিসত্ত্ব বলিলেন, “এ রমণী আমার ভাৰ্য্যা নহে ; এ যক্ষিণী ; এ আমার পাঁচজন সঙ্গীকে খাইয়া ফেলিয়াছে।” তখন যক্ষিণী বলিল, “হায়, হায় ! পুরুষে ক্ৰোধকালে নিজের সহধৰ্ম্মিণীকেও যক্ষিণী বলিতে কুষ্ঠিত হয় না।” কিয়ৎক্ষণ যাইবার পর যক্ষিণী প্ৰথমে গর্ভিণীর বেশে এবং পরে একটী মাত্ৰ সন্তান প্রসব করিয়াছে এইরূপ রমণীর বেশে, পুত্ৰ কোলে লইয়া বোধিসত্ত্বের অনুগমন করিতে লাগিল । পথে যে এই দুই জনকে দেখিতে পাইল, সেই বনচরদিগের ন্যায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিল এবং বোধিসত্ত্ব পূর্ববৎ উত্তর দিলেন। অবশেষে বোধিসত্ত্ব তক্ষশিলায় উপনীত হইলেন। তখন যক্ষিণী মায়াবলে পুত্রের অন্তৰ্দ্ধান ঘটাইয়া একাকিনী তঁহার সঙ্গে সঙ্গে রহিল। বোধিসত্ত্ব নগরদ্বারে গিয়া একটা পান্থশালায় আশ্ৰয় লইলেন ; তঁহার তেজোবলে যক্ষিণী ঐ গৃহে প্ৰবেশ করিতে পারিল না ; সে দিব্যরূপ ধারণ করিয়া দ্বারদেশে বসিয়া রহিল। সেই সময়ে তক্ষশিলার রাজা উদ্যানাভিমুখে যাইতেছিলেন ; তিনি যক্ষিণীর রূপ দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন এবং একজন অনুচরকে বলিলেন, “গিয়া জানত, ঐ রমণীর স্বামী আছে, কি না ।” সে ব্যক্তি ব্যক্ষিণীর নিকট গিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ভদ্রে, আপনার স্বামী আছেন কি ?” ব্যক্ষিণী বোধিসত্ত্বকে দেখাইয়া বলিল, “ঐ যে আমার স্বামী গৃহের অভ্যন্তরে বসিয়া রহিয়াছেন।” তাহা শুনিয়া বোধিসত্ত্ব বলিলেন, “ঐ রমণী আমার স্ত্রী নহে ; ও ব্যক্ষিণী ; ও আমার পাঁচজন অনুচরকে খাইয়া ফেলিয়াছে।” যক্ষিণী পূর্ববৎ বলিল, “হায় হায়! পুরুষে রাগের বশে যাহা মুখে আসে তাহাই বলে।” রাজপুরুষ রাজার নিকট গিয়া দুই জনের মুখে যাহা যাহা শুনিয়াছিল, নিবেদন করিল।