পাতা:জাতক (প্রথম খণ্ড) - ঈশানচন্দ্র ঘোষ.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R$ 8 প্ৰথম নিপীঠ আলয়ে উপস্থিত হইলেন। শঙ্খশ্রেষ্ঠ তাহাকে দেখিবামাত্ৰ “এসহে বন্ধু’ বলিয়া আলিঙ্গন করিলেন এবং যথারীতি তাহার সৎকার ও সম্মান করিতে লাগিলেন। এইরূপে কতিপয় দিবস অতিবাহিত হইলে একদিন শঙ্খশ্রেষ্ঠ জিজ্ঞাসিলেন, “বন্ধু, তুমি কি অভিপ্ৰায়ে আসিয়াছ বল।” পিলিয় শ্ৰেষ্ঠী বলিলেন, “ আমার বড় বিপদ ; আমি সৰ্ব্বস্বান্ত হইয়াছি; এখন তুমি সাহায্য না করিলে আমার দাড়াইবার উপায় নাই।” “সাহায্য করিব বৈকি। তুমি নিশ্চিন্ত হও।” এই বলিয়া শঙ্খশ্রেষ্ঠ ভাণ্ডাগার খুলিয়া তাহা হইতে পিলিয় শ্ৰেষ্ঠীকে চল্লিশ কোটি সুবর্ণ দিলেন। অতঃপর তঁহার স্থাবর, অস্থাবর, দাসদাসী প্রভৃতি সমস্ত অবশিষ্ট সম্পত্তিও দুই সমান ভাগ করিয়া এক ভাগ বন্ধুকে দান করিলেন। পিলিয় শ্রেষ্ঠ এই বিপুল বিভব লাভ করিয়া, বারাণসীতে প্ৰতিগমন করিলেন এবং সেখানেই বাস করিতে লাগিলেন । ইহার পর শঙ্খশ্রেষ্ঠীরও সেইরূপ বিপত্তি উপস্থিত হইল। এই সঙ্কট হইতে কিরূপে উদ্ধার পাইব চিন্তা করিতে করিতে র্তাহার মনে হইল, “আমিত একবার বন্ধুর মহা উপকার করিয়াছিলাম ; তাহাকে আমার সমস্ত বিভবের অৰ্দ্ধাংশ দিয়াছিলাম ; তিনি কখনও আমায় প্ৰত্যাখ্যান করিতে পরিবেন না ; অতএব তঁহারই নিকটে যাই।” এই সঙ্কল্প করিয়া তিনি ভাৰ্য্যাসহ পদব্ৰজে বারাণসী যাত্ৰা করিলেন এবং সেখানে উপস্থিত হইয়া ভাৰ্য্যাকে বলিলেন,- ‘ভদ্রে, তুমি আমার সঙ্গে রাজপথে হাঁটিয়া গেলে ভাল দেখাইলে না। আমি গিয়া তোমাকে লইয়া যাইবার জন্য যানাদি পাঠাইতেছি। তুমি তাহাতে আরোহণ করিয়া বহু অনুচর সঙ্গে লইয়া নগরে প্রবেশ করিবে । যতক্ষণ যান না পাঠাই ততক্ষণ এখানে অপেক্ষা কর।” ইহা বলিয়া তিনি ভাৰ্য্যাকে একটা ধৰ্ম্মশালায় রাখিয়া দিলেন, একাকী নগরে প্রবেশ করিয়া পিলিয়ের আলয়ে উপস্থিত হইলেন এবং শ্রেষ্ঠীর নিকট সংবাদ পাঠাইলেন, “রাজগৃহ নগর হইতে আপনার বন্ধু শঙ্খশ্রেষ্ঠী আগমন করিয়াছেন।” পিলিয় বলিলেন, তঁহাকে আসিতে বল ; কিন্তু আগন্তুকের অবস্থা দেখিয়া তিনি আসন হইতে উখিত হইলেন না, অভ্যর্থনাও করিলেন না, কেবল জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি মনে করিয়া আসিয়াছেন ??” শঙ্খশ্রেষ্ঠ উত্তর দিলেন, “আপনার দর্শন লাভার্থ।” “বাসা কোথায় লইয়াছেন ?” “এখন পৰ্য্যন্ত বাসা ঠিক হয় নাই ; আমার পত্নীকে ধৰ্ম্মশালায় রাখিয়া বরাবর এখানে আসিয়াছি ” “এখানে ত আপনাদের থাকার সুবিধা হইবে না। কোথাও বাসা ঠিক করুন গিয়া । সেখানে পাক করিয়া আহার করিবেন এবং যেখানে ইচ্ছা চলিয়া যাইবেন। কিন্তু আমার সঙ্গে আর কখনও দেখা করিবেন না।” ইহা বলিয়া তিনি এক ভৃত্যকে আজ্ঞা দিলেন, “আমার বন্ধুর কাপড়ের খোঁটে এক আঢ়া মোটা ভুসি দাও।” সেই দিনই নাকি পিলিয় সহস্রশকট-প্রমাণ উৎকৃষ্ট ধান্য ঝাড়াইয়া গোলায় পুরিয়াছিলেন। অথচ সেই মহাচৌর এমনই অকৃতজ্ঞ যে যাহার নিকট হইতে চল্লিশকোটি সুবৰ্ণ পাইয়াছিলেন সেই বন্ধুকে এখন এক আঢ়া মাত্র ভুসি দিলেন। পিলিয়ের ভৃত্য এক আঢ় ভূসি মাপিয়া উহা একটা ধামায় ফেলিয়া বোধিসত্ত্বের নিকট উপস্থিত হইল। বোধিসত্ত্ব চিন্তা করিতে লাগিলেন, “এই পাপাত্মা আমার নিকট চল্লিশ কোটি সুবৰ্ণ পাইয়া এখন আমায় কেবল এক আঢ়া ভুসি দিতেছে! ইহা আমি গ্ৰহণ করিব বা গ্ৰহণ করিব না ?’ অনন্তর তিনি ভাবিলেন, এই অকৃতজ্ঞ ও মিত্রদ্রোহী ব্যক্তি আমায় বিনষ্টসর্বস্ব জানিয়া বন্ধুত্ববন্ধন উচ্ছিন্ন করিল ; কিন্তু আমি যদি এই এক আঢ়া ভুসি আতি তুচ্ছ বলিয়া গ্ৰহণ না করি, তাহা হইলে আমারও বন্ধুত্ববন্ধচ্ছেদনের অপরাধ হইবে। যাহারা মূঢ় ও নীচমন তাহারাই লব্ধবস্তু অল্প বলিয়া গ্ৰহণ করিতে পরামুখ হয় এবং এইরূপে বন্ধুত্ব বিনাশ করে। অতএব এ যে, এক আঢ়া ভুসি দিল তাহাই গ্ৰহণ