“আর কি কাঁদে লো, নদি, তোর তীরে বসি,
মথুরার পানে চেয়ে ব্রজের সুন্দরী?
আর কি পড়ে লো এবে তোর তীরে খসি
অশ্রুধারা মুকুতার কমরূপ ধরি?”[১]
বলিয়া তাঁহার মধুর বাঁশরী বাজাইতেন। কতকাল হইল বঙ্গের কবিকুঞ্জ মধুহীন হইয়াছে, কিন্তু অদ্যাপি যেন সে বাঁশীর সুর বাঙ্গালার বাতাসে ভাসিয়া বেড়াইতেছে। ‘শ্যামা’ বঙ্গভূমিকে লক্ষ্য করিয়া মধুসূদন বলিয়াছিলেন—
“মধুহীন করো নাক তব মন-কোকনদে।”
তাঁহার সে প্রার্থনা সফল হইয়াছে। বঙ্গভূমি বক্ষের উপর মধুর স্মৃতি ধারণ করিয়া রাখিয়াছেন। যত দিনের পর দিন যাইতেছে, ততই মধুর মধুর কবিতার রসে বঙ্গ অধিকতররূপে নিমগ্ন হইতেছে।
সভ্যবৃন্দ, কৃত্তিবাস কাশীদাসের দেশে, রামপ্রসাদ ভারতচন্দ্রের দেশে, জয়দেব মুকুন্দরাম চণ্ডীদাস জ্ঞানদাসের দেশে মধুসূদনের জন্ম; যে দেশের নির্ম্মল আকাশে বলাকার খেলা, শ্যামল বনানীতে শ্যামা দোয়েলের সঙ্গীত, সুনীল তটিনীতে দাঁড়িমাঝিদের সারিগান, সেই দেশে মধুসূদনের জন্ম; যেখানে সায়ংকালে নদীতীরে বটবৃক্ষের মূলে বসিয়া রাখাল বালক
“হরি, বেলা গেল সন্ধ্যা হল’ পার কর আমারে—”