পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 বুশেয়ার সমুদ্রের ধারে জাহাজ-ঘাটার শহর। পারস্যের অন্তরঙ্গ স্থান এ নয়।

 বৈকালে পারসীক পার্লামেণ্টের একজন সদস্য আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। জিজ্ঞাসা করতে চাইলেন আমি কী জানতে চাই। বললুম, পারস্যের শাশ্বত স্বরূপটি জানতে চাই যে-পারস্য আপন প্রতিভায় স্বপ্রতিষ্ঠিত।

 তিনি বললেন, বড়ো মুশকিল। সে পারস্য কোথায় কে জানে। এ দেশে এক বৃহৎ দল আছে তারা অশিক্ষিত, পুরোনো তাদের মধ্যে অপভ্রষ্ট, নতুন তাদের মধ্যে অনুদগত। শিক্ষিত বিশেষণে যারা খ্যাত তারা আধুনিক, নতুনকে তারা চিনতে আরম্ভ করেছে, পুরোনোকে তারা চেনে না।

 এই প্রসঙ্গে আমার বক্তব্য এই যে, সকলেরই মধ্যে দেশ প্রকাশমান নয়, বহুর মধ্যে সে অস্পষ্ট অনির্দিষ্ট। দেশের যথার্থ প্রকাশ কোনো কোনো বিশেষ মানুষের জীবনে ও উপলব্ধিতে। দেশের আন্তভৌম প্রাণধারা ভাবধারা অকস্মাৎ একটা কোন ফাটল দিয়ে একটি কোনো উৎসের মুখেই বেরিয়ে পড়ে। যা গভীরের মধ্যে সঞ্চিত তা সর্বত্র বহুলোকের মধ্যে উদঘাটিত হয় না। যা অধিকাংশের আবিল চিত্তের আড়ালে থাকে, তা কারো কারো প্রকৃতিগত মানসিক স্বচ্ছতার কাছে সহজেই অভিব্যক্ত হয়। তাঁর পুঁথিগত শিক্ষা কতদূর, তাঁকে দেশ মানে কি মানে সে কথা অবান্তর। সে রকম কোনো কোনো দৃষ্টিবান লোক পারস্যে নিশ্চয়ই আছে, তারা সম্ভবত নামজাদাদের দলের মধ্যে নয়, এমন কি তারা বিদেশীদের কেউ হতেও পারে; কিন্তু পথিক মানুষ কোথায় তাদের খুঁজে পাবে।