পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩৪
জাপানে-পারস্যে

 বাগানের তরুতলে আমাদের ভোজের আয়োজন। কিন্তু এখনকার মতো ব্যর্থ হল। আমি নিরতিশয় ক্লান্ত। একটি কার্পেট বিছানো ছোটো ঘরে খাটের উপর শুয়ে পড়লুম। বাতাসে তাপ নেই, সামনে খোলা দরজা দিয়ে ঘন সবুজের উচ্ছ্বাস চোখে এসে পড়ছে।

 কিছুক্ষণ পরে বিছানা ছেড়ে বাগানে গিয়ে দেখি গাছতলায় বড়ো বড় ডেকচিতে মোটা মোটা পাচক রান্না চড়িয়েছে, আমাদের দেশে যজ্ঞের রান্নার মত। বুঝলুম রাত্রিভোজের উদ্যোগপর্ব।

 অতিথির সম্মানে আজ এখানে সরকারী ছুটি। সেই সুযোগে অনেকক্ষণ থেকে লোক জমায়েৎ হয়েছিল। আমাদের দেরি হওয়াতে ফিরে গেছে। যাঁরা বাকি আছেন তাদের সঙ্গে বসে গেলুম। সকলেরই মুখে তাঁদের রাজার কথা। বললেন, তিনি অসামান্য প্রতিভার জোরে দশ বছরের মধ্যে পারস্যের চেহারা বদলিয়ে দিয়েছেন।

 এইখানে আধুনিক পারস্য ইতিহাসের একটুখানি আভাস দেওয়া যেতে পারে।

 কাজার জাতীয় আগা মহম্মদ খাঁর দানবিক নিষ্ঠুরতায় এই ইতিহাসের বর্তমান অধ্যায় আরম্ভ হল। এরা পারসীক নয়। কাজররা তুর্কি জাতের লোক। তৈমুরলঙ্গ এদের পারস্যে নিয়ে আসে। বর্তমানে রেজা শা পহলবীর আমলের পূর্ব পর্যন্ত পারস্যের রাজ-সিংহাসন এই জাতীয় রাজাদের হাতেই ছিল।

 ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে শা নাসির উদ্দিন ছিলেন রাজা। তখন থেকে রাষ্ট্রবিপ্লবের সূচনা দেখা দিল। এই সময়ে পারস্যের মন যে জেগে উঠেছে তার একটা নিদর্শন দেখা যায় বাবিপন্থীদের ধর্মবিপ্লবে। ঠিক এই সময়েই রামমোহন রায় বাংলাদেশে প্রচার করেছিলেন ধর্মসংস্কার। নাসির উদ্দিন অতি নিষ্ঠুরভাবে এই সম্প্রদায়কে দলন করেন।