পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০৬
জাপানে-পারস্যে

কথা বলে, জীবনের সমস্যা সুকঠোর করে দিয়ে এদেরই মাঝে যথার্থ কড়া বাছাই হয়ে গেছে, দুর্বলেরা বাদ পড়ে যারা নিতান্ত টিঁকে গেল এর সেই জাত। মরণ এদের বাজিয়ে নিয়েছে। এদের যে এক-একটি দল তারা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, এদের মাতৃভূমির কোলের পরিসর ছোটো, নিত্য বিপদে বেষ্টিত। জীবনের স্বল্প দান এরা সকলে মিলে ভাগ করে ভোগ করে। এক বড়ো থালে এদের সকলের অন্ন, তার মধ্যে শৌখিন রুচির স্থান নেই; তারা পরস্পরের মোটা রুটি অংশ করে নিয়েছে, পরস্পরের জন্যে প্রাণ দেবার দাবি এই এক রুটি ভাঙার মধ্যেই। বাংলাদেশে নদীবাহুবেষ্টিত সন্তান আমি, এদের মাঝখানে বসে খাচ্ছিলুম আর ভাবছিলুম সম্পূর্ণ আলাদা ছাঁচে তৈরি মানুষ আমরা উভয়ে। তবুও মনুষ্যত্বে গভীরতর বাণীর যে-ভাষা সে-ভাষায় আমাদের সকলেরই মন সায় দেয়। তাই এই অশিক্ষিত বেদুয়িন দলপতি যখন বললেন, আমাদের আদিগুরু বলেছেন, যার বাক্যে ও ব্যবহারে মানুষের বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই সেই যথার্থ মুসলমান, তখন সে-কথা মনকে চমকিয়ে দিলে তিনি বললেন ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানে যে বিরোধ চলছে এ পাপের মূল রয়েছে সেখানকার শিক্ষিত লোকদের মনে। এখানে অল্পকাল পূর্বে ভারতবর্ষ থেকে কোনো কোনো শিক্ষিত মুসলমান গিয়ে ইসলামের নামে হিংস্র-ভেদবুদ্ধি প্রচার করবার চেষ্টা করে ছিলেন, তিনি বললেন আমি তাদের সত্যতায় বিশ্বাস করি নে, তাই তাঁদের ভোজের নিমন্ত্রণে যেতে অস্বীকার করেছিলেম; অন্তত আরবদেশে তাঁরা শ্রদ্ধা পান নি। আমি একে বললেম, একদিন কবিতায় লিখেছি “ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুয়িন”—আজ আমার হৃদয় বেদুয়িন হৃদয়ের অত্যন্ত কাছে এসেছে, যথার্থ ই আমি তাদের সঙ্গে এক অম্ন খেয়েছি অন্তরের মধ্যে।

 তার পরে যখন আমাদের মোটর চলল, দুই পাশের মাঠে এদের