পাতা:জাপানে-পারস্যে-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
জাপানে
৮১

এমনি করে নিশিদিন আমাদের যা ক্ষয় হচ্ছে, সেটাতে আমাদের শক্তির কম অপব্যয় হচ্ছে না।

 সেদিন সকালবেলায় মনে হল আমার মন যেন কানায় কানায় ভরে উঠেছে। এতদিন যে-রকম করে মনের শক্তি বহন করেছি, সে যেন চালুনিতে জল ধরা, কেবল গোলমালের ছিদ্র দিয়ে সমস্ত বেরিয়ে গেছে; আর এখানে এ-যেন ঘটের ব্যবস্থা। আমাদের দেশের ক্রিয়াকর্মের কথা মনে হল। কী প্রচুর অপব্যয়! কেবলমাত্র জিনিসপত্রের গণ্ডগোল নয়,—মানুষের কী চেঁচামেচি, ছুটোছুটি, গলা-ভাঙাভাঙি! আমাদের নিজের বাড়ির কথা মনে হল। বাঁকাচোরা উঁচু-নিচু রাস্তার উপর দিয়ে গোরুর গাড়ির চলার মতো সেখানকার জীবনযাত্রা। যতটা চলছে তার চেয়ে আওয়াজ হচ্ছে ঢের বেশি। দরোয়ান হাঁক দিচ্ছে, বেহারাদের ছেলেরা চেঁচামেচি করছে, মেথরদের মহলে ঘোতর ঝগড়া বেধে গেছে, মারোয়াড়ী প্রতিবেশিনীরা চীৎকার শব্দে একঘেয়ে গান ধরেছে, তার আর অন্তই নেই। আর ঘরের ভিতরে নানা জিনিসপত্রের ব্যবস্থা এবং অব্যবস্থা,—তার বোঝা কি কম! সেই বোঝা কি কেবল ঘরের মেঝে বহন করছে! তা নয়, প্রতিক্ষণেই আমাদের মন বহন করছে। যা গোছালো, তার বোঝা কম; যা অগোছালো, তার বোঝা আরো বেশি,—এই যা তফাত। যেখানে একটা দেশের সমস্ত লোকই কম চেঁচায়, কম জিনিস ব্যবহার করে, ব্যবস্থাপূর্বক কাজ করতে যাদের আশ্চর্য দক্ষতা,—সমস্ত দেশ জুড়ে তাদের যে কতখানি শক্তি জমে উঠেছে, তার কি হিসেব আছে?

 জাপানিরা যে রাগ করে না, তা নয়,—কিন্তু সকলের কাছেই একবাক্যে শুনেছি, এরা ঝগড়া করে না। এদের গালাগালির অভিধানে একটিমাত্র কথা আছে—বোকা—তার উর্ধ্বে এদের ভাষা পৌঁছয় না!