ভ্রূকুটি করে বেড়াতে লাগল। অবশেষে মেঘের বাণী জলধারায় নেবে পড়ল। নারদের বীণাধ্বনিতে বিষ্ণু গঙ্গা-ধারায় বিগলিত হয়েছিলেন একবার, আমার সেই পৌরাণিক কথা মনে এসেছিল। কিন্তু এ কোন্ নারদ প্রলয়-বীণা বাজাচ্চে? এর সঙ্গে নন্দী ভৃঙ্গীর যে মিল দেখি, আর ওদিকে বিষ্ণুর সঙ্গে রুদ্রের প্রভেদ ঘুচে গেচে।
এপর্য্যন্ত জাহাজের নিত্যক্রিয়া এক রকম চলে যাচ্ছে, এমন কি আমাদের প্রাতরাশেরও ব্যাঘাত হল না। কাপ্তেনের মুখে কোনো উদ্বেগ নেই। তিনি বল্লেন এই সময়টাতে এমন একটু আধটু হয়ে থাকে;―আমরা যেমন যৌবনের চাঞ্চল্য দেখে বলে’ থাকি, ওটা বয়সের ধর্ম্ম।
ক্যাবিনের মধ্যে থাক্লে ঝুমঝুমির ভিতরকার কড়াইগুলোর মত নাড়া খেতে হবে তার চেয়ে খোলাখুলি ঝড়ের সঙ্গে মোকাবিলা করাই ভাল। আমরা শাল কম্বল মুড়ি দিয়ে জাহাজের ডেকের উপর গিয়েই বস্লুম। ঝড়ের ঝাপট পশ্চিম দিক থেকে আসছে, সেইজন্যে পূর্ব্বদিকের ডেকে বসা দুঃসাধ্য ছিল না।
ঝড় ক্রমেই বেড়ে চল্ল। মেঘের সঙ্গে ঢেউয়ের সঙ্গে কোনো ভেদ রইল না। সমুদ্রের সে নীল রং নেই,—চারিদিক ঝাপসা, বিবর্ণ। ছেলেবেলায় আরব্য উপন্যাসে পড়েছিলুম, জেলের জালে যে ঘড়া উঠেছিল তার ঢাকনা খুল্তেই তার ভিতর থেকে ধোঁয়ার মত পাকিয়ে পাকিয়ে প্রকাণ্ড দৈত্য