পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
২৩

দিয়ে ব্রহ্মদেশের কোনো চেহারাই দেখ্‌তে পেলুম না। মনে হল রেঙ্গুন ব্রহ্মদেশের ম্যাপে আছে, কিন্তু দেশে নেই। অর্থাৎ এ সহর দেশের মাটি থেকে গাছের মত ওঠে নি, এ সহর কালের স্রোতে ফেনার মত ভেসেছে,― সুতরাং এর পক্ষে এ চায়গাও যেমন অন্য জায়গাও তেমনি।

 আসল কথা পৃথিবীতে যে-সব সহর সত্য তা’ মানুষের মমতার দ্বারা তৈরি হয়ে উঠেচে। দিল্লি বল, আগ্রা বল, কাশী বল, মানুষের আনন্দ তাকে সৃষ্টি করে তুলেচে। কিন্তু বাণিজ্যলক্ষ্মী নির্ম্মম, তার পায়ের নীচে মানুষের মানস-সরোবরের সৌন্দর্য্য-শতদল ফোটে না। মানুষের দিকে সে তাকায় না, সে কেবল দ্রব্যকে চায়,——যন্ত্র তার বাহন। গঙ্গা দিয়ে যখন আমাদের জাহাজ আস্‌ছিল, তখন বাণিজ্যশ্রীর নির্লজ্জ নির্দ্দয়তা নদীর দুই ধারে দেখ্‌তে দেখ্‌তে এসেছি। ওর মনে প্রীতি নেই বলেই বাংলাদেশের এমন সুন্দর গঙ্গার ধারকে এত অনায়াসে নষ্ট করতে পেরেচে।

 আমি মনে করি আমার পরম সৌভাগ্য এই যে, কদর্য্যতার লৌহ-বন্যা যখন কলকাতার কাছাকাছি দুই তীরকে, মেটেবুরুজ থেকে হুগলি পর্য্যন্ত, গ্রাস করার জন্যে ছুটে আস্‌ছিল, আমি তার আগেই জন্মেছি। তখনো গঙ্গার ঘাটগুলি গ্রামের স্নিগ্ধ বাহুর মত গঙ্গাকে বুকের কাছে আপন করে’ ধরে রেখেছিল, কুঠির নৌকাগুলি তখনো সন্ধ্যাবেলায় তীর তীরে ঘাটে ঘাটে ঘরের লোকগুলিকে ঘরে ঘরে ফিরিয়ে আন্‌ত। একদিকে