পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৩১

আর তার সঙ্গে যতটা সম্ভব চিনি মেশানো। অকূল সমুদ্র ফুলে ফুলে উঠ্‌চে, দিগন্তের পর দিগন্তের পর্দ্দা উঠে উঠে যাচ্চে, দুর্গমতার একটা প্রকাণ্ড মূর্ত্তি চোখে দেখ্‌তে পাচ্চি; অথচ আলিপুরে খাঁচার সিংহটার মত তাকে দেখে আমোদ বোধ করছি; ভীষণও মনোহর হয়ে দেখা দিচ্ছে।

 আরব্য উপন্যাসে আলাদিনের প্রদীপের কথা যখন পড়েছিলুম, তখন সেটাকে ভারি লোভনীয় মনে হয়েছিল। এ ত সেই প্রদীপেরই মায়া। জলের উপরে স্থলের উপরে সেই প্রদীপটা ঘস্‌চে, আর অদৃশ্য দৃশ্য হচ্ছে, দূর নিকটে এসে পড়চে। আমরা এক জায়গায় বসে আছি, আর জায়গাগুলোই আমাদের সামনে এসে পড়চে।

 কিন্তু মানুষ ফলটাকেই যে মুখ্যভাবে চায় তা নয়, ফলিয়ে তোলানোটাই তার সব চেয়ে বড় জিনিষ। সেই জন্যে, এই যে ভ্রমণ করচি, এর মধ্যে মন একটা অনুভব করচে―সেটি হচ্ছে এই যে, আমরা ভ্রমণ করচিনে। সমুদ্রপথে আস্‌তে আস্‌তে মাঝে মাঝে দূরে দূরে এক-একটা পাহাড় দেখা দিচ্ছিল, আগাগোড়া গাছে ঢাকা; ঠিক যেন কোন্ দানবলোকের প্রকাণ্ড জন্তু তার কোঁকড়া সবুজ রোঁয়া নিয়ে সমুদ্রের ধারে ঝিমতে ঝিমতে রোদ পোয়াচ্চে; মুকুল তাই দেখে বল্লে ঐখানে নেবে যেতে ইচ্ছা করে। ঐ ইচ্ছাটা হচ্চে সত্যকার ভ্রমণ করবার ইচ্ছা। অন্য কর্ত্তৃক দেখিয়ে দেওয়ার বন্ধন হতে মুক্ত হয়ে নিজে দেখার ইচ্ছা। ঐ পাহাড়-ওয়ালা ছোট ছোট