পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
জাপান-যাত্রী

 মানুষ যখন জগৎকে না-এর দিক থেকে দেখে, তখন তার রূপক একেবারে উল্টে যায়। প্রকাশের একটা উল্টো পিঠ আছে, সে হচ্চে প্রলয়। মৃত্যুর ভিতর দিয়ে ছাড়া প্রাণের বিকাশ হতেই পারে না। হয়ে-ওঠার মধ্যে দুটো জিনিষ থাকাই চাই,—যাওয়া এবং হওয়া। হওয়াটাই হচ্ছে মুখ্য, যাওয়াটাই গৌণ।

 কিন্তু মানুষ যদি উল্টো পিঠেই চোখ রাখে,—বলে সবই যাচ্চে, কিছুই থাক্‌চে না; বলে জগৎ বিনাশেরই প্রতিরূপ, সমস্তই মায়া, যা-কিছু দেখ্‌চি, এ সমস্তই “না”; তাহলে এই প্রকাশের রূপকেই সে কালো করে, ভয়ঙ্কর করে দেখে; তখন সে দেখে, এই কালো কোথাও এগচ্চে না, কেবল বিনাশের বেশে নৃত্য কর্‌চে। আর অনন্ত রয়েচেন আপনাতে আপনি নির্লিপ্ত, এই কালিমা তাঁর বুকের উপর মৃত্যুর ছায়ার মত চঞ্চল হয়ে বেড়াচ্চে, কিন্তু স্তব্ধকে স্পর্শ কর্‌তে পারচে না। এই কালো দৃশ্যত আছে, কিন্তু বস্তুত নেই—আর যিনি কেবলমাত্র আছেন, তিনি স্থির, ঐ প্রলয়রূপিনী না-থাকা তাঁকে লেশমাত্র বিক্ষুব্ধ করে না। এখানে আলোর সঙ্গে কালোর সেই সম্বন্ধ, থাকার সঙ্গে না-থাকার যে সম্বন্ধ। কালোর সঙ্গে আলোর আনন্দের লীলা নেই, এখানে যোগের অর্থ হচ্চে প্রেমের যোগ নয়, জ্ঞানের যোগ। দুইয়ের যোগে এক নয়, একের মধ্যেই এক। মিলনে এক নয়, প্রলয়ে এক।

 কথাটাকে আর একটু পরিষ্কার কর্‌বার চেষ্টা করি।