পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৫৫

নিমন্ত্রণ আর রাখ্‌তে পারিনে। চাঁদ যেমন তার একটা মুখ সূর্য্যের দিকে ফিরিয়ে রেখেছে, তার আর একটা মুখ অন্ধকার― তেমনি লোকালয়ের প্রচণ্ড টানে মানুষের সেই দিকের পিঠটাতেই চেতনার সমস্ত আলো খেলচে, অন্য একটা এদিক আমরা ভুলেই গেচি; বিশ্ব যে মানুষের কতখানি, সে আমাদের খেয়ালেই আসে না।

 সত্যকে যেদিকে ভুলি, কেবল যে সেই দিকেই লোকসান, তা নয়—সে লোকসান সকল দিকেই। বিশ্বকে মানুষ যে পরিমাণে যতখানি বাদ দিয়ে চলে, তার লোকসানের তাপ এবং কলুষ সেই পরিমাণে ততখানি বেড়ে ওঠে। সেই জন্যেই ক্ষণে ক্ষণে মানুষের একেবারে উল্টোদিকে টান আসে। সে বলে “বৈরাগ্যমেবাভয়ং”—বৈরাগ্যের কোনো বালাই নেই। সে বলে’ বসে, সংসার কারাগার; মুক্তি খুঁজতে শান্তি খুঁজতে সে বনে, পর্ব্বতে, সমুদ্রতীরে ছুটে যায়। মানুষ সংসারের সঙ্গে বিশ্বের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে বলেই, বড় করে প্রাণের নিঃশ্বাস নেবার জন্যে তাকে সংসার ছেড়ে বিশ্বের দিকে যেতে হয়। এত বড় অদ্ভুত কথা তাই মানুষকে বল্‌তে হয়েছে—মানুষের মুক্তির রাস্তা মানুষের কাছ থেকে দূরে।

 লোকালয়ের মধ্যে যখন থাকি, অবকাশ জিনিষটাকে তখন ডরাই। কেননা লোকালয় জিনিষটা একটা নিরেট জিনিষ, তার মধ্যে ফাঁক মাত্রই ফাঁকা। সেই ফাঁকাটাকে কোন মতে চাপা দেবার জন্যে আমাদের মদ চাই, তাস পাশা চাই, রাজা উজির