পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৬৭

 বন্দরে পৌঁছবামাত্র জাপান থেকে কয়েকখানি অভ্যর্থনা টেলিগ্রাম ও পত্র পাওয়া গেল। কিছুক্ষণ পরে প্রধান অফিসার এসে আমাকে বল্লেন, এ যাত্রায় আমাদের সাঙ্ঘাই যাওয়া হল না; একেবারে এখান থেকে জাপান যাওয়া হবে। আমি জিজ্ঞাসা কর্‌লুম, কেন? তিনি বল্লেন, জাপানবাসীরা আপনাকে অভ্যর্থনা করবার জন্যে প্রস্তুত হয়েছে, তাই আমাদের সদর অফিস থেকে টেলিগ্রামে আদেশ এসেচে, অন্য বন্দরে বিলম্ব না করে চলে যেতে। সাঙ্ঘাইয়ের সমস্ত মাল আমরা এইখানেই নামিয়ে দেব ―অন্য জাহাজে করে সেখানে যাবে।

 এই খবরটি আমার পক্ষে যতই গৌরবজনক হোক, এখানে লেখার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার লেখার কারণ হচ্চে এই যে, এই ব্যাপারের একটু বিশেষত্ব আছে, সেটা আলোচ্য। সেটা পুনশ্চ ঐ একই কথা। অর্থাৎ ব্যবসার দাবী সচরাচর যে-পাথরের পাঁচিল খাড়া করে আত্মরক্ষা করে, এখানে তার মধ্যে দিয়েও মানব সম্বন্ধের আনাগোনার পথ আছে। এবং সে পথ কম প্রশস্ত নয়।

 জাহাজ এখানে দিন দুয়েক থাক্‌বে। সেই দু’দিনের জন্যে সহরে নেবে হোটেলে থাকবার প্রস্তাব আমার মনে নিলে না। আমার মত কুঁড়ে মানুষের পক্ষে আরামের চেয়ে বিরাম ভাল; আমি বলি, সুখের ল্যাঠা অনেক, সোয়াস্তির বালাই নেই। আমি মাল তোলা-নামার উপদ্রব স্বীকার করেও, জাহাজে রয়ে গেলুম। সে জন্যে আমার যে বক্‌শিস্ মেলেনি, তা নয়।