পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
জাপান-যাত্রী

তাঁর সেই চোখে ঐ পাহাড় টুকুকে দেখা আমাদের শক্তিতে নেই—আমরা দেখচি নূতনকে, তিনি দেখ্‌চেন তাঁর চিরন্তনকে; আমরা অনেক তুচ্ছকে বাদ দিয়ে দিয়ে দেখচি, তিনি ছোট বড় সমস্তকেই তাঁর এক বিরাটের অঙ্গ করে দেখ্‌চেন,—এই জন্যেই ছোটও তাঁর কাছে বড়, ভাঙাও তাঁর কাছে জোড়া; অনেক তাঁর কাছে এক। এই দৃষ্টিই সত্য দৃষ্টি।

 জাহাজ যখন একেবারে বন্দরে এসে পৌঁছল, তখন মেঘ কেটে গিয়ে সূর্য্য উঠেচে। বড় বড় জাপানী অপ্সরা নৌকা, আকাশে পাল উড়িয়ে দিয়ে, যেখানে বরুণদেবের সভাপ্রাঙ্গণে সূর্য্যদেবের নিমন্ত্রণ হয়েচে, সেইখানে নৃত্য কর্‌চে। প্রকৃতির নাট্যমঞ্চে বাদলার যবনিকা উঠে গিয়েচে,—ভাবলুম এইবার ডেকের উপরে রাজার হালে বসে, সমুদ্রের তীরে জাপানের প্রথম প্রবেশটা ভাল করে দেখে নিই।

 কিন্তু সে কি হবার জো আছে? নিজের নামের উপমা গ্রহণ কর্‌তে যদি কোনো অপরাধ না থাকে, তাহলে বলি আমার আকাশের মিতা যখন খালাস পেয়েছেন, তখন আমার পালা আরম্ভ হল। আমার চারিদিকে একটু কোথাও ফাঁক দেখ্‌তে পেলুম না। খবরের কাগজের চর তাদের প্রশ্ন এবং তাদের ক্যামেরা নিয়ে আমাকে আচ্ছন্ন করে দিলে।

 কোবে সহরে অনেকগুলি ভারতবর্ষীয় বণিক আছেন, মধ্যে বাঙালীর ছিটেফোঁটাও কিছু পাওয়া যায়। আমি হংকং সহরে পৌঁছেই এই ভারতবাসীদের টেলিগ্রাম পেয়েছিলুম,