পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
জাপান-যাত্রী

পাই, তত বেশী নতুন নয়, যতটা গোড়ায় মনে হয়েছিল; আসলে পুরোণো, ভঙ্গীটাই নতুন।

 তারপরে আর এক মুস্কিল হয়েচে এই যে, দেখতে পাচ্চি পৃথিবীর সকল সভ্য জাতই বর্ত্তমান কালের ছাঁচে ঢালাই হয়ে একই রকম চেহারা অথবা চেহারার অভাব ধারণ করেচে। আমার এই জানলায় বসে কোবে সহরের দিকে তাকিয়ে, এই যা দেখচি, এ ত লোহার জাপান,―এ ত রক্তমাংসের নয়। একদিকে আমার জানলা, আর-একদিকে সমুদ্র, এর মাঝখানে সহর। চীনেরা যেরকম বিকটমূর্ত্তি ড্র্যাগন আঁকে—সেইরকম। আঁকাবাঁকা বিপুল দেহ নিয়ে সে যেন সবুজ পৃথিবীটিকে খেয়ে ফেলেচে। গায়ে গায়ে ঘেঁষাঘেঁষি লোহার চালগুলো ঠিক যেন তারি পিঠের আঁসের মত রৌদ্রে ঝক্‌ঝক্‌ কর্‌চে। বড় কঠিন, বড় কুৎসিত,―এই দরকার নামক দৈত্যটা। প্রকৃতির মধ্যে মানুষের যে অন্ন আছে, তা ফলে-শস্যে বিচিত্র এবং সুন্দর; কিন্তু সেই অন্নকে যখন গ্রাস করতে যাই, তখন তাকে তাল পাকিয়ে একটা পিণ্ড করে তুলি; তখন বিশেষত্বকে দরকারের চাপে পিষে ফেলি। কোবে সহরের পিঠের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি, মানুষের দরকার পদার্থটা স্বভাবের বিচিত্রতাকে একাকার করে দিয়েচে। মানুষের দরকার আছে, এই কথাটাই ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে, হাঁ কর্‌তে কর্‌তে পৃথিবীর অধিকাংশ কে গ্রাস করে ফেল্‌চে। প্রকৃতিও কেবল দরকারের সামগ্রী, মানুষও কেবল দরকারের মানুষ হয়ে আস্‌চে।