পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাপান-যাত্রী
৭৯

 যে দিন থেকে কল্‌কাতা ছেড়ে বেরিয়েছি, ঘাটে ঘাটে দেশে দেশে এইটেই খুব বড় করে দেখতে পাচ্চি। মানুষের দরকার মানুষের পূর্ণতাকে যে কতখানি ছাড়িয়ে যাচ্চে, এর আগে কোন দিন আমি সেটা এমন স্পষ্ট করে দেখতে পাই নি। এক সময়ে মানুষ এই দরকারকে ছোট করে দেখেছিল। ব্যবসাকে তারা নীচের জায়গা দিয়েছিল; টাকা রোজগার করাটাকে সম্মান করে নি। দেবপূজা করে’, বিদ্যাদান করে’, আনন্দ দান করে’ যারা টাকা নিয়েচে, মানুষ তাদের ঘৃণা করেচে। কিন্তু আজ কাল জীবনযাত্রা এতই বেশী দুঃসাধ্য, এবং টাকার আয়তন ও শক্তি এতই বেশী বড় হয়ে উঠেচে যে, দরকার এবং সরকারের বাহনগুলোকে মানুষ আর ঘৃণা কর্‌তে সাহস করে না। এখন মানুষ আপনার সকল জিনিসেরই মূল্যের পরিমাণ, টাকা দিয়ে বিচার কর্‌তে লজ্জা করে না। এতে করে সমস্ত মানুষের প্রকৃতি বদল হয়ে আস্‌চে—জীবনের লক্ষ্য এবং গৌরব, অন্তর থেকে বাইরের দিকে, আনন্দ থেকে প্রয়োজনের দিকে অত্যন্ত ঝুঁকে পড়্‌চে। মানুষ ক্রমাগত নিজেকে বিক্রি কর্‌তে কিছুমাত্র সঙ্কোচ বোধ কর্‌চে না। ক্রমশই সমাজের এমন একটা বদল হয়ে আস্‌চে টাকাই যে, মানুষের যোগ্যতারূপে প্রকাশ পাচ্চে। অথচ এটা কেবল দায়ে পড়ে ঘটচে, প্রকৃতপক্ষে এটা সত্য নয়। তাই এক সময়ে যে-মানুষ মনুষ্যত্বের খাতিরে টাকাকে অবজ্ঞা কর্‌তে জানত, এখন সে টাকার খাতিরে মনুষ্যত্বকে অবজ্ঞা কর্‌চে। রাজতন্ত্রে, সমাজতন্ত্রে, ঘরে বাইরে, সর্ব্বত্রই তার