পাতা:জাপান-যাত্রী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
জাপান-যাত্রী

দুঃখে, আঘাতে উত্তেজনায়, ওরা নিজেকে সংযত করতে জানে। সেই জন্যেই বিদেশের লোকেরা প্রায় বলে―জাপানীকে বোঝা যায় না, ওরা অত্যন্ত বেশী গূঢ়। এর কারণই হচ্চে, এরা নিজেকে সর্ব্বদা ফুটো দিয়ে, ফাঁক দিয়ে গলে পড়তে দেয় না।

 এই যে নিজের প্রকাশকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করতে থাকা,― এ ওদের কবিতাতেও দেখা যায়। তিন লাইনের কাব্য জগতের আর কোথাও নেই। এই তিন লাইনই ওদের কবি, পাঠক, উভয়ের পক্ষে যথেষ্ট। সেই জন্যেই এখানে এসে অবধি, রাস্তায় কেউ গান গাচ্চে, এ আমি শুনি নি। এদের হৃদয় ঝরনার জলের মত শব্দ করে না, সরোবরের জলের মত স্তব্ধ। এ পর্য্যন্ত ওদের যত কবিতা শুনেচি সবগুলিই হচ্চে ছবি দেখার কবিতা, গান গাওয়ার কবিতা নয়। হৃদয়ের দাহ ক্ষোভ প্রাণকে খরচ করে, এদের সেই খরচ কম। এদের অন্তরের সমস্ত প্রকাশ সৌন্দর্য্য-বোধে। সৌন্দর্য-বোধ জিনিসটা স্বার্থনিরপেক্ষ। ফুল, পাখী, চাঁদ, এদের নিয়ে আমাদের কাঁদাকাটা নেই। এদের সঙ্গে আমাদের নিছক সৌন্দর্য্যভোগের সম্বন্ধ—এরা আমাদের কোথাও মারে না, কিছু কাড়ে না—এদের দ্বারা আমাদের জীবনে কোথাও ক্ষয় ঘটে না। সেই জন্যেই তিন লাইনেই এদের কুলোয়, এবং কল্পনাটাতেও এরা শান্তির ব্যাঘাত করে না। এদের দুটো বিখ্যাত পুরোণো কবিতার নমুনা দেখলে আমার কথাটা স্পষ্ট হবে:―