পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (প্রথম খণ্ড).pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সন্ধ্যা হয়—চারিদিকে শান্ত নীরবতা

সন্ধ্যা হয়-চারিদিকে শান্ত নীরবতা ঃ

খড় মুখে নিয়ে এক শালিখ যেতেছে উড়ে চুপে;

গোরুর গাড়িটি যায় মেঠো পথ বেয়ে ধীরে ধীরে;

আঙিনা ভরিয়া আছে সোনালি খড়ের ঘন স্তুপে;


পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;

পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;

পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে;

আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।


একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর, জানি একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুজে আর, জানি ; হৃদয়ের পথ-চলা শেষ হলো সেই দিন—গিয়েছে সে শান্ত হিম ঘরে, অথবা সান্তনা পেতে দেরি হবে কিছু কাল—পথিবীর এই মাঠখানি ভুলিতে বিলম্বর হবে কিছু দিন ; এ মাঠের কয়েকটা শালিথের তরে আশ্চর্য বিসময়ে আমি চেয়ে রবো কিছু কাল অন্ধকার বিছানার কোলে, আর সে সোনালি চিল ডানা মেলে দরে থেকে আজো কি মাঠের কুয়াশায় ভেসে আসে? সেইন্যাড়া অশবথের পানে আজো চলে যায় সন্ধ্যা সোনার মতো হ’লে ? ধানের নরম শিষে মেঠো ইদুরের চোখ নক্ষত্রের দিকে আলো চায় সন্ধ্যা হ’লে ? মউমাছি চাক আজো বাঁধে না কি জামের নিবিড় ঘন ডালে, মউ খাওয়া হয়ে গেলে আজো তারা উড়ে যায় কুয়াশায় সন্ধ্যার বাতাসে– কতো দরে যায়, আহা •••অথবা হয়তো কেউ চালতার ঝরাপাতা জৰালে মযর চাকের নিচে—মাছিগলো উড়ে যায়---বারে পড়ে.ম'রে থাকে ঘাসে— ভেবে ভেৰে ৰ্যথা পাৰো ; মনে হৰে, পৃথিবীর পথে যদি থাকিতাম বেঁচে ভেবে ভেবে ব্যথা পাব ;—মনে হবে, পথিবীর পথে যদি থাকিতাম বেচে দেখিতাম সেই লক্ষয়ীপে'চাটির মুখ যারে কোনোদিন ভালো ক’রে দেখি নাই আমি— এমন লাজুক পাখি,—ধসের ডানা কি তার কুয়াশার ঢেউয়ে ওঠে নেচে ; যখন সাতটি তারা ফুটে ওঠে অন্ধকারে গাবের নিবিড় বকে আসে–সে কি নামি ? জিউলির বাবলার অাঁধার গলির ফ'কে জোনাকীর কুহকের আলো ঝরে না কি ? ঝিঝি'র সবুজ মাংসে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বউদের প্রাণ ভুলে যায় ; অন্ধকারে খুজে তারে আকন্দবনের ভিড়ে কোথায় হারালো মাকাল লতার তলে শিশিরের নীল জলে কেউ তার পাবে না সন্ধান । আর সেই সোনালি চিলের ডানা-ডানা তার আজো কি মাঠের কুয়াশায় ভেসে আসে —সেই ন্যাড়া অশ্বখের পানে আজো চলে যায় সন্ধ্যা সোনার মতো হলে ? ধানের নরম শিষে মেঠো হ'দরের চোখ নক্ষত্রের দিকে আজো চায় ? আশ্চৰ্য বিস্ময়ে আমি চেয়ে রবো কিছু কাল অন্ধকার বিছানার কোলে । ১৬৮