পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অঞ্জলি—‘অাজ অামি যাবই ।” -“সেদিনও তো যেতে চেয়েছিলে ।” —“সেদিন তো জৰ্দা কিনবার পয়সাও দিতে পার নি তুমি, আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলে —-বায়স্কোপ দেখবার পয়সা কোথায় পেতে ?” —‘অাচচ্ছা যে ও—নিরঞ্জনকে বলে অামি পাশের জোগাড় করতে পারি । ‘নিরঞ্জন কে ? ’ ‘এই যে-নিরঞ্জন অরোরা বায়োস্কোপ চালাচ্ছে ।” ‘তাকে চেনো তুমি ?” মাথা নেডে—“হঁ।ণ, একসঙ্গে পড়েছিলাম ইস্কুলে —“তোমাকে পাশ দেবে ? ” —“কেন দেবে না ? ” ‘যদিও-বা দেয়, তুমি চাইবে ? ” ‘নিজে অামি থিয়েটার বায়স্কোপ বড় একটা দেখি না- দেখার রুচি ও নেই, সাধ নেই ।” অঞ্জলি অামাকে বাধা দিয়ে—“থাক, আমি বায়স্কোপ দেখতে চাই না ।" কেন ? ‘তুমি নিজে মনে-মনে ভাবো তোমার রুচি আমার চেয়ে ঢের বেশি উচু দরের ?” —“তা না। ; কাটা তুমি বুঝলে না অঞ্জলি—শোনো, চলে যাচ্ছে কোথায় ?” ঘরের ভিতর পায়চারি করতে-করতে অঞ্জলি—“যাচ্ছি না—-অামার এক জায়গায় বসে থাকতে ভাল লাগে না ।” খানিকটা ঘুরে এসে আঁচল গুটিয়ে এক কোণে বসল । বললাম—“অামার জীবনের সঙ্গে কেন তোমার নিজের জীবনের তুলনা করো ? ‘কেন ? কী হয়েছে তাতে ?” ‘অদ্রান মাসে এক-একটা পরিতাক্ত পাখির নীড দেখেছ হিজলগাছের ডাল-পালার ভিতর দিয়ে ? কতকগুলো খ পাতার ছিবড়ে শুধু ? অার কিছু না ? হেমন্তের কুয়াশা অার শীত বাতাসের অবাধগতি তার ভিতর দিয়ে ?”