পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একটু অপেক্ষা করা যাক। এমন একটা দিন আসবে না কি যখন আশা বাসনার অতুচ্চতার স্বাদ না মেটালেও জীবনের নিতান্ত প্রয়োজনীয় দায়িত্ব গুলোকে সে মিটিয়ে দিতে পারবে? কেন আসবে না? নিশ্চয়ই সেই সফলতা তার জন্য প্রতীক্ষা করছে। ভবিষ্যতের এমন একটা দিন যখন চামেলি দিদিদের প্রয়োজনীয় সমস্ত দাবিদাওয়া সে মিটিয়ে দিতে পারবে হয় তো ওদের বিয়ের ব্যবস্থাও সে করে দিতে পারবে – কিংবা চাকরির ব্যবস্থা কিংবা জীবনের আবশ্যকমত সাদাসিধে সাধারণ সচ্ছলতার বন্দোবস্ত সব-
সন্তোষের জীবনের পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি এতেই।
মানুষের জীবনের সাধারণ কর্তব্যগুলোই আজ তার ধর্ম।
নিজের কোনো মতামত, স্বাধীনতা বা আকাঙ্ক্ষার জন্য কোনো ভালবাসা নেই আজ তার, নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কোনো উন্নতি বা যশ আজ আর চায় না সে। এক দিন সন্তোষ এমনই ভাবত বটে যে নিজের ঐশ্বর্য বাড়াতে গিয়ে কোনো দিকেই ভ্রূক্ষেপ করবে না সে আর, কোনো প্রবঞ্চিতের কথাই ভাবতে যাবে না। বরং মানুষকে সজ্ঞানে প্রবঞ্চনা করে চলবে সে, নিপীডন করে, নির্যাতন করে, চারদিককার মানুষের জীবনগুলোকে ব্যথায়, ক্ষুধায়, হয়তো মৃতুতেও, ভরে দিয়ে নিজের সমৃদ্ধি ও সম্মান সঞ্চয় করে চলবে সে।
সঞ্চয় করতে পারা যেত কি না বিধাতা জানেন— কিন্তু সে রকম নির্মম অক্লান্ত চেষ্টার পথ ধরতে গিয়ে সন্তোষের জীবনে কোনো বাধা ছিল না।
নিজের উপলব্ধি আজ তার সে পথ রোধ করে দাঁঁড়িয়েছে।
অসাধারণ পথের অসম সাহস ও রক্তাক্ততা দিয়ে কোনো দরকার নেই তার। সাধারণ সামান্য জীবনের দায়িত্বগুলোকে সস্তুষ্ট করে এই শান্ত মধুরতার পথেই চলুক সে।
পৃথিবীর আদর-অভ্যর্থনার কোলাহলময় দারুণ রুদ্র জীবন না হয় একেবারেই চাপা পড়ে রইল।
তা হোক। সামান্য মানুষের কর্তব্যগুলোকে পালন করে, সহজ দাবিদাওয়াগুলোর ভিতর দিয়ে জীবনটাকে নিভৃতভাবে চালিয়ে, জীবনে স্নিগ্ধতা চাচ্ছে সন্তোষ।

এরই জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করছে সে।

১৫২