পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পূর্ণিমা তার নিজের ভাগ্যকে দিদির ভাগের সঙ্গে তুলনা করে এতক্ষণ ব্যথা পেয়ে এ জিনিশটার উপশমের দিকটা খুঁজে বের করে তৃপ্তি পাচ্ছে। জীবনের অন্ধকারের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকবার মত সহাশক্তি, সহিষ্ণুতা বা তামাশাবোধ নেই পূর্ণিমার। উজ্জ্বল এ পথের যাত্রী— ওর দিদির চেয়েও ঢের বেশি করে। কিন্তু একটা তীক্ষ্ম কর্কশ সমুদ্রের মত হতাশার অমাবস্যা যে ওর চারদিকে! ওর ভিতর থেকে ও কী দিয়ে যে কী করবে ভাবতে পারছে না সন্তোষ।
পূর্ণিমা বললে, ‘জামাইবাবুর জন্য টুক্কুরও, দেখো, একটা ভাল বিয়ে হবে। কী বলো?
সন্তোষ কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না।
পূর্ণিমা বললে ‘আর রবিনেরও পড়াশুনোর সুবিধে হবে; টুইশনি পাচ্ছিল না— দিদিও চাকরি ছেডে দিয়েছিল। টাকার জন্য ওর বি-এ পড়া হত না। বোধ হয় আর। কিন্তু এখন, পূর্ণিমা হঠাৎ উৎফুল্ল হয়ে উঠে বললে, 'এখন তো জামাইবাবুই ওকে পড়াতে পারবেন; অত বড় চাকরিওয়ালা, চাকরিও দিতে পারবেন—হয়তো বিলেত ঘুরিয়েই আনলেন— কী বলো? অসম্ভব কি কিছু?'
সন্তোষ ঘাড় নেড়ে বললে, ‘না।'
-'এমন তো কত জায়গায়ই হচ্ছে —হচ্ছে না?'
সন্তোষ বললে—'হচ্ছে বই কি?'
পূর্ণিমা অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে বললে—‘সুখের মুখ এইবার দেখলাম আমরা। এতদিন আমরা ভাইবোন মিলে কষ্টই পেয়ে আসছিলাম।'
সন্তোষ পূর্ণিমাকে আশ্বাস দিয়ে বললে—'তোমারও সুখ। সুখ বই-কি; ওদের সুখে তোমারও সুখ।'
অনুভূতির এই সুখটুকু, এ ছাড়া ব্যক্তিগত কোনো সুখ-সম্পদ-আশ্রয় তার দিদির এ বিবাহের থেকে পূর্ণিমা কি আর আহরণ করতে পারবে? আহরণের উচ্ছিষ্ট যদিও-বা কিছু থাকে টুক্কু-রবিনের জন্য—সন্তোষকে গ্রহণ করে পূর্ণিমার, সে সব সুযোগ চলে গিয়েছে।

'কিন্তু পরের সুখেও– তেমন ভাবে গ্রহণ করে নিলে—সুখী হতে পারা যায়। আর এরা তো তোমার ভাইবোন, পূর্ণিমা'।

১৫৭