পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*কবে ? ‘তু-একদিনের মধ্যেই ' ‘কদিন থাকবেন ? ‘সম্প্রতি এক মাস তো বটে—’ কালুবাবু ঠোটে নল ছুইয়ে রাখল, তামাক টানছিল না, বললে, “আমি আপনাকে জানাব । দিন পনের-কুড়ির ভিতরেই— এক বছরের মধ্যে যে-জিনিসের কোন কুল-কিনারা হল না, পনের-কুড়ি দিনের মধ্যে কালুবাবু তার একটা কিনারা করে ফেলবেন—এ-রকম কত প্রতিশ্ৰুতি কত মানুষের কাছে পেয়েছে নিশীথ জীবনের কত পথে বঁাকে। প্রতিশ্রুতি পেয়ে ফলের জন্য অপেক্ষা করে-করে টের পেয়েছে ফল আর-এক জিনিস । মানুষের, বড় মানুষের, সৎ মানুষের মুখের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কেন মানুষ এটা করে দেব, সেটা করে দেব, এ-রকম আশ্বাস দেয় মানুষকে ? আশ্চর্য, অনায়াসে, আরামে প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেলে । তাকিয়েও দেখতে যায় না কী বিষম আলাখোলা সরলতায় তারা বসে আগছে যার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল । ‘আমি উঠি কালুবাবু।” আচ্ছ। আসুন'—নিশীথের দিকে না তাকিয়ে ফরাসের উপর ছড়ানো কতগুলো নথিপত্রের দিকে চোখ রেখে অন্যমনস্কভাবে হাত তুলে নিশীথকে বিদায় দিল কালুবাবু। বাড়ির দিকে ফিরে যেতে-যেতে নিশীথের মনে হল রানুর সম্পর্কে নরেনকে সন্দেহ করে কথাটা কালুবাবুকে বলে মোটেই ভাল করে নি সে । অর্চিতা বলেছিল, কালুবাবু খুব খাটি মানুষ । অর্চিতা নিজেও কি খাটি ? এই দুই খাটিতে মিলে নিশীথকে কেমন নিভূম নিঝঝুম করে রাখে নি কি—হৃদয়ের ভিতর কোটি দিয়ে গুণ করা শূন্য বললে তাকে ] পথ দিয়ে ফিরতে-ফিরতে মনে হল চেগতের বাতাসের মত তাকে বাজন করে চলেছে যেন সমস্ত ব্যক্ত নীলকণশ ; শেফালির জঙ্গলে বড়-বড় বোলতার চাক সোনালি রোদে ছায়ার নক্ষত্রের মত যেন ; কত শত পতঙ্গ কেমন মিলে-মিশে প্রেমে, পরিকল্পনায়, সমবেদনায় উৎসারিত হয়ে মানুষের ده