পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পকেট থেকে একটা ভাল চুরুট বের করে ওয়াজেদ আলির হাতে তুলে দিয়ে হরিলাল বললেন, “আপনার কেসের সব সিগারেট ত বিলিয়ে দিয়েছেন । চুরুটটা জ্বালিয়ে নিন, ভাল জিনিস। আজ তো মঙ্গলবার, আগামী রববার কলেজ কমিটির মিটিং, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের বাংলোতে । দুটো ভারী কথা আপনাদের সকলকে জানিয়ে দিতে চাচ্ছি অগমি । গভর্নিং বডির প্রণয় সব মেম্বারই তো এখানে হাজির আছেন। মুসলিম মেম্বার অবশ্য চার-পাচজন নেই এখানে, কিন্তু তাদের মুখপাত্র ওয়াজেদ আলি সাহেব নিজেই আছেন— তারিফ জানিয়ে অনেকেই হাততালি দিয়ে উঠল । আলি সাহেব কিছু খুশি হয়ে, গোলাপছড়ির মত পোড় খেয়ে, মুখ কুঁচকে বললেন, ‘ও সম্মানটা জনাব ইমাম হোসেনের—জনাব সৈয়দ আলি—জনাব’ —থেমে গেলেন অলি সাহেব । 'আপনি যে খুব ইমানদণর তা তো দেখলুম। খুব ভাল কথা । আমরা সকলে অবশ্যি জনাব ওয়াজেদ আলি সাহেবের কথাই সবচেয়ে অাগে মনে করি ।” হরিলালবাবু বললেন, ‘আমাদের কলেজের প্রিন্সিপাল কালীশঙ্করবাবু চরিশ টাকা মাইনে পাচ্ছেন। উকিলদের একজন জুনিয়র মুখফেঁাড়ও তো এর চেয়ে বেশি পায় । অথচ উনি দশ বছর ধরে কলেজে প্যণদণচ্ছেন । এত বড় একটা কলেজ, এত ছেলে, প্রিন্সিপাল সাহেবকে এত কম মাইনে দিলে চলে না ত’— ‘তা তো ঠিকই’—ওয়াজেদ আলি বললেন, ‘আমিও ভেবেছি এ সব কথা । আগমণর মনে হয়— আচ্ছা ওকে—সাতশ টাকা করে দিলে কেমন হয় ।” এ-রকম কথা আর কারু মুখ থেকে বেরুলে তার গালেই চড় মারতেন হরিলাল । সাতশ টাকা ! বটে ! সাতশ টাকা এক সঙ্গে কোনো দিন দেখেছে কি কালীশঙ্করের মুক্ষি পায়রার বাচ্চারণ, ধনা আর জন ? ওদের ধাড়ি বাপ দেখুক গে ; ওরা দেখেছে ! আমার ছেলেরা নাতিরা তো হাজার-হাজার টণকণর গিলে চটকাচ্ছে রোজ । ওয়াজেদ আগলি কথাটথা বলে বেশ, তর্কবিতর্ক করতে পারে । কিন্তু ফিনান্সের জ্ঞান নেই ; না কি, আমাকে একটু জব্দ করতে যাচ্ছে ? ফিচেল ওয়াজেদ আগলি ? ‘না আগলি সাহেব । আমি ভেবেছি সগড়ে চারশ টাকা করে দেব ।” ‘মোটে !”—আগলি সাহেব উঠে দাড়িয়েছিলেন, হগসতে-হাসতে বসে পড়লেন । ‘আহা, আপনাদের খানদণনি চাল দিয়ে কালীশঙ্করকে বিচার করলে চলবে ゞO○