পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেক কমে যাবে ; নিজের সুবিধা মত তা হলে সুমনার কাছে আসবে সে । কোনো-কোনো রণতে একেবারে না এলেও চলবে হয় তো । আজ রাতে অবিশ্ব্যি রাজেনের মাও ছিল না, সে নিজেও কেমন বেহু’শ হয়ে ঘুমিয়েছে প্রায় সমস্তটা রাত ; কোথায় জলের কলসি—কী হল সুমনাদির—অৰ্চনা ঘুমের আবেশ থেকে নিজেকে খসাতে-খসাতে তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে সুমনার ঘরের ভিতর গেল। ঘরের ভিতর ঢুকে বিছানার কাছে গিয়ে দেখল মানুষটা কেমন নিঃসাড় হয়ে পড়ে আছে, হাত-চুল-কাপড়-ঠ্যাঙের দিকে তাকালে মনে হয় মরে গেছে যেন । কেমন ভেঙে গেছে নাক । মরে গেছে কি ? অর্চনা অস্তে-আস্তে সুমনার হাতটা তুলে নিল—উঃ কী ভীষণ ঠাণ্ডা, যেন লিকলিকে সাপে ছোবল দিয়ে ঠাণ্ডা বিষ ঢেলে দিয়েছে সুমনার প্রাণের ভিতর । ‘মরে গেল দিদি । মরাই ভাল । বড় কষ্ট পাচ্ছিল । নিশীথদণর থাকা উচিত ছিল জলপাইহাটিতে। সুমনাদির এ-রকম অবস্থায় কলকাতায় যাওয়ার কোনো মানেই হয় না তার । অর্চনা হয় তো কাতর না হয়ে বিছানার পাশে বসে ভাল করে বুঝে নিচ্ছিল সুমনার নাড়ী । না, মরেছে বলে মনে হচ্ছে না, অনেক ক্ষণ নাড়ী হাতে বসে থেকে মনে হল যেন অৰ্চনার । তিরতির করছে নাড়ী । মেয়ে মানুষের প্রাণ, কি সহজে যায় ? যাবেই বা কেন ? নিশীথ চলে যাবে আর সুমনা মরে যাবে—সেই রাত্রেই ? একটা কথা হল ? কী ভগববে নিশীথ । তাড়াতাড়ি অর্চনা কাজের দিশপাশ স্থির করে ফেলল –মহিমকে অবিলম্বেই পাঠিয়ে দিল মজুমদার ডাক্তারের কাছে । তাকে না পেলে যে-কোনো কেজেণ ডাক্তারকে নিয়ে আসবে। তাড়াতাড়ি স্টোভ জ্বালিয়ে সেঁক দিতে লাগল, কী একটা কবিরাজি ওষুধ ব্যবহার করল অর্চনা ( জিনিসটা হাতুড়ে হয়ে যাচ্ছে ; নিশীথ, হরীত, বা সুমনা নিজেও, পায়ে দাড়ানো থাকলে, বলে দিত অৰ্চনাকে ) । সাড়া পাওয়া গেল, স্টোভে দুধ গরম করে দু-চামচ দেওয়া গেল । সাড়া পাওয়া গেল বটে, কিন্তু কোনো শব্দ নেই, চোখ মেলানো যাচ্ছে না, শরীরের ঠাণ্ডা ভাবটা যেমন তেমনই । মরে কি যাচ্ছে ? এখনও মরে নি, কিন্তু আস্তে-আগস্তে মরে যাচ্ছে কি ? ডাক্তার মজুমদার এসে তাড়াতাড়ি নানা রকম পরীক্ষা করে বললেন, 'ন', ভয়ের নেই কিছু। কিছু না, কিছু হবে না । ঠিক আছে।’ ১২৭