পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই পরিজ, তোমার গায়ে—জিজ্ঞেস করলাম আমার স্ত্রীকে’—বলে হো হো করে হেসে উঠল রবিশঙ্কর—‘পরিজ বানিয়ে রাখলে কী করে ? পরিজ বানালে ? কে দিল পরিজ পয়দা করে তোমাকে ? ও-হো-হেণঃ-হেঃ হেঃ—’ গাড়ির গদি নেচে উঠতে লাগল । রবিশঙ্করের আপাদমস্তকের, পশ্চাদেশেরও, কেমন একটা উন্মত্ত প্রফুল্লতায় । বেসামাল ভাবটা কেটে গেলে পাইপটা মুখে দিতে গিয়ে, ছুঁড়ে ফেলে দি ল গদির এক দিকে, পকেট থেকে পাউচ বার করে নিয়ে বললে, “আর-একদিন সঁা করে দুপুরবেলা বাড়ি ফিরে এলুম অফিস থেকে’—পাইপের ভিতরে যা কিছু ছিল জানলা দিয়ে ঝেড়ে ফেলতে-ফেলতে রবিশঙ্কর বললে, ‘কোনোদিন দুপুরবেলা তো অফিস থেকে ফিরতুম না অামি । একেবারে বমণল ধরা পড়ে গেল । ‘কী হ’ল ?’ ‘একেবারে বমল ধরা পড়ে গেল'—উত্তেজিত হয়ে বললে রবিশঙ্কর । নিশীথ বললে, -- স্ত্রী যদি এ রকম হয়, কী করে তাকে নিয়ে ঘর করা যায় ।” পাউচের থেকে তামাক বার করে পাইপে ভরতে-ভরতে রবিশঙ্কর বললে, পাচদিনের ছুটি নিয়ে বম্বের থেকে সান্টাকুজে গেলুম, ভার্জিনিয়াকে বললুম, সান্টাকুজে জুহুর সমুদ্রে বেড়িয়ে চান করে লোনাভালা যাব, লোনাভালা থেকে বোম্বে ফিরতে আমার সাত দিনও দেরি হতে পারে । কিন্তু সান্টাকুজে না গিয়ে বোম্বের একটা ইরানি হোটেলে বিরিয়ানি মাংস, মদ, কিছুটা খেয়ে একটা অ্যালো ইণ্ডিয়ান, খনিকি ঠিক নয়, খুশকির সঙ্গে, অনেক রণত কাটিয়ে, বোম্বের সেই পার্শি ছেনলি মেয়েটা—ক নাম ওর—পেরিন—পেরিন, পেরিনের বাবার মখমলের জুতোটা পায়ে দিয়ে টিপিটপি আমার ফ্ল্যাটে ঢুকতেই দেখি দরজাজানল। বন্ধও করে নি, খানিকটা অবজে অন্ধকারের মধ্যে তিন জোড়া মানুষ আসকে পিঠে আর চাসকে পয়েসের ভিতর হুটোপুট খাচ্ছে। সব আইরিশ স্কচ ছোড়ার্টুড়ি । বেহু’শ হয়ে পড়ে আছে—এনতার মদ খেয়েছে । পাইপট। জলিয়ে নিয়ে দু-চারটে ফুরফুরে টান দিয়ে রবিশঙ্কর বললে, এর ভিতর থেকে আমার নিজের স্ত্রীকে খুঁজে বার করবার কোনো প্রবৃত্তি হল না । তার চেয়ে ঢের ভাল জিনিস সেখানে ছিল—একেবারে মদে মালেতে একাকার হয়ে লুটিয়ে, মরিন, সেই মেয়েটির নাম—আইরিশ মেয়ে–নিশীথবাবু এমন জিনিস আর হয় না, মরিনকে পাজাকোলা করে তুলে আমার ঘরে ২২৩