পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন বিস্তার ছাড়িয়ে একটা চতুর্থ বিস্তারেরও অবতারণা করতে পারে যেন রবিশঙ্কর । সে যাই পারুক অণর না-পারুক, শেষ পর্যন্ত স্ক্রিমজারের ক্লাসের সেই বিমূঢ় বেতাল ছাড়া রবিশঙ্কর কিছুই নয় অণর । কিন্তু কে বুঝবে তা ? রবিশঙ্কর সম্পর্কে ত্রিশ বছরের হিসেব কণর হাতে আছে ? অন্তর্ভেদী দৃষ্টি নিয়ে রবিশঙ্করকে তলিয়ে দেখবার অবকাশ, রুচি আছে কার । দশটা বেজে গেছে । চার-পাচ দিন কলেজ ছুটি, গভর্নমেণ্ট অফিসগুলোও ছুটি । ছুটির দিনে নানারকম মানুষের কাছে যাওয়া যায় । বাড়ি বা চাকরির সুবিধে করে দিতে পারবে নিশীথের জন্য—এমন কোনো লোক অবশ্য কলকাতায় কোথাও নেই । তবুও কলকাতায় থাকতে হবে নিশীথের । সে পুরুষ। কাজেই তার কাছ থেকে যে পুরুষাৰ্থ প্রত্যাশা করে নারীরা ও পুরুষেরা, সে তো স্বাভাবিক ; তার নিজের নিঃসংস্কার মনও যে তাকে সুস্থির থাকতে দিচ্ছে না, কোথাও কারু কাছে গিয়ে কোনো একটা কিছু সংঘটিত করে নেবার জন্যে ক্রমাগত তাগিদ দিচ্ছে সেটাই কৌতুককর । তিন-চার বছর ধরে কলকাতার কলেজগুলোতে চাকরির চেষ্টা করছে সে । প্রথম বছর প্রাণন্ত প্রমণস করেছিল, অতটা হয়রানি চাকরির দিক থেকে কোনো ব্যবসার দিকে ঘুরিয়ে দিলে দাড়িয়ে যেত ব্যবসাটা । শেষ পর্যন্ত নাক দিয়ে রক্ত বেরুতে লাগল। ফলে কলকাতার ডাক্তার বেশ মোটা টাকা মেরে নিল নিশীথের কাছ থেকে, কিন্তু কলেজের চাকরি হল না । প্রথম বারের অত চেষ্টা-তদ্বিরে হতে-হতেও হল না যখন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল না যখন নানা রকম কলেজ প্রতিষ্ঠানের নাম লোকেরাও কেমন একটা অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস, নিরাশায় পীড়িত হয়ে উঠল তার মন । এর পরে দু-তিন বার মন খোলা চোখেই সে চেষ্টা করেছে—কিছু হবে না জেনে, তবুও মনের মারাত্মক মুদ্রাদেণযে, কলকাতার কলেজে উপযুক্ত অধ্যাপনার কাজ পাবার জন্যে। সঙ্গে-সঙ্গে খবরের কাগজে চেষ্টা করেছে, অন্য কয়েকট। দিকেও, কোথাও হয় নি কিছু ভাল কিছু নেই কোথাও—তার জন্যে নেই । কলকাতায় চাকরি কেন চাচ্ছে নিশীথ ? জলপাইহাটিতে না হোক, মফস্বলের অন্য কোনো কলেজে কাজের চেষ্টা করলেই পারে ; পেয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু না । মফস্বলের প্রকৃতি সে ভালবাসে, লোকজনদেরও ভাল ২৩৪