পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুঝেছিল কি তা নিশীথ ? নাকি বুঝেও যা করেছে ইচ্ছে করেই করেছে । ঘোষ সাহেব যে প্রতিবারই নিশীথের পরিচয় জানতে চান, এমন ভাব দেখান যে তিনি নিশীথের মুখ চেনেন না, সেটা নিশীথের পক্ষে বাস্তবিকই একটা অত্যাচার । এটাকে কী নাম দেবে মোহিত ? এর কি কোনো সুনাম আছে ? ভাড়ামো ছাড়া একে কী অণর বলবে সে ভণ্ডামিটাকে আড়াল করে প্রফেসরের আশ্চর্য অধ্যাপকীয় সুসম্বিং । ঘোষের অণজুস্থতার কথা বলছিল নিশীথ । সে কী রকম আণত্মস্থ । সত্যিই কতদূর মহৎ বোঝে হয় তো নিশীথ, জানে সব, কিন্তু ন-জানার ভানটাকে ঢেকে কেমন একটা মানানসই দীনতার অালো ছডিয়ে । এ বিষয়ে প্রফেসর ঘোষের ঠিক উল্টো নিশীথ ; না কি নিজের অধীনস্থদের কাছে সে নিজেও একটি ঘোষ । না, তা হয় তো না । নিশীথকে দেখে তা মনে হচ্ছিল না মোহিতার । ‘অণপনাকে তো এর অাগে এ বাড়িতে দেখেছি আমি ।’ ‘মাঝে-মাঝে ঘোষ সাহেবের কাছে আসি আমি । আমাকে দেখেছেন আপনি, মনে আগছে আপনার ?’ ‘বেশি তো অণসেন না ।” ‘আমি তো কলকাতায় থাকি না ।" ‘গেল বছর আসেন নি । ঘণ্টা দেড়েক ছিলেন প্রফেসরের ঘরে তার আগের বছর । আমরা তখন মুসৌরি যাচ্ছি, বাধাছাদার পাঠ চলছে। ঘোষ অবিশ্যি শালগ্রামের মত বসে আগছেন তার ঘরে । মোটরের পা-দানিতে একবার পা রাখবেন, রিজার্ভ গাড়ির ফুটবোডে আর-একবার— খুব বড় জ্ঞানস্থবির মানুষ—সকলে ধন্য বোধ করেন—নিশীথ একটু নুনের ছিটে মেখে সদন্তঃকরণে হেসে বললে, ‘প্রফেসরের এ বাড়িতে ঢুকলেই যেন সেই আগেকার প্রাচীন সভ্যতা খুঁজে পেয়েছি মনে হয় । কেমন একটা স্তব্ধতা প্রশান্তি এখানে ; চারিদিককার বর্বরতার থেকে নিজেকে সংরক্ষণ করে রেখেছে ৷' ‘সেটা বেশি মিশলে বুঝতে পারবেন । বছরে, চার-বছরে একবার উকি দিয়ে কী করে—’ কিন্তু কথাটা শেষ করল না মোহিতা, হাসির ফেঁাড় ঠোটের কোণায় আটকে রইল । উনিশশ চুয়াল্লিশেও আপনি এসেছিলেন প্রফেসরের সঙ্গে দেখা করতে’— २8१