পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হারীতের পক্ষে । তাকে চলে যেতে হবে আবার কলকাতায়, কিংবা আরো দূরে ইণ্ডিয়ান ইউনিয়নের অন্তস্তলের আবহাওয়ার ভেতরে, যা ভাল নয় তাকে শোধিত, বিদূরিত করবার জন্যে, যা ভাল তাকে সঞ্চারিত করে দেবার জন্যে । এখানে জলপাইহাটিতে কেমন একটা অদ্ভূত অনিশ্চয়তার ভেতর নিরবচ্ছিন্ন নিঃস্ব হয়ে ঘুরে ফিরছে সমস্ত অবুঝ ও বুদ্ধিমান । এদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে গেছে, রোজই যাচ্ছে—এখনো যাচ্ছে । এদের এখানে থাকতে বলেছে হারীত—রোজই একবার তার রোদে ঘুরে অপসবার সময় এইখানেই এদের থেকে যেতে বলছে । হগরীতের কথা শোনবার মত মনের অবস্থা এদের নয় } মন পশ্চিমের দিকে ছুটছে, এখন কি এরা অণর পদ্মার পাড়ে পড়ে থাকবে ? কি আশ্চর্য অবর্ণন সমৃদ্ধি আছে এই পদ্মা-মেঘনার দেশে, মানুষ যদি আতঙ্ক ঝেড়ে ফেলে একটু সুস্থির ভাবে বুঝে দেখবার চেষ্টা করত, কাজ করতে শুরু করে দিত, এ-দেশের ও দেশের নয়, পৃথিবীর আশ্চর্য মানবধন্য নাটাটাকে ভালবেসে ; কিন্তু এরা আছে কি নেই, সেই হুঙ্কার শুনে, ছিটের ফতুয়া-জামা পরে, দেখ, ডোরাকাটা জেব্রার মত ছিটিয়ে-ছিটকে হগওয়া দিচ্ছে সব । দুরন্ত জেব্রার মত এরাই না, না, সে রকম প্রাণবন্তভাবে ছুটে গিয়েছিল আমেরিকাঅস্ট্রেলিয়ার ওজস্বী উপনিবেশীরা, এরা কীটপতঙ্গের মত আগুনের থেকে বড় আণগুনের দিকে ঝাপিয়ে চলেছে । কলকাতায় বাড়ি নেই, চাকরি নেই, খাদ্য নেই। মৃত্যু আছে—তবুও পেচোয় পাওয়া বাচ্চাদের মত মুখ থুবড়ে পড়ছে গিয়ে কলকাতার অলিতে-গলিতে ফুটপাতে । তা হলে জলপাইহণটিতে হগরীতের সবচেয়ে বড় কাজ কি এখন এদের থামিয়ে রাখা ? হরীত ভেবে দেখছিল কিছু কাল থেকে । এ কাজটা সে নিলেও নিতে পারত তার হাতে । কিন্তু তবুও নিচ্ছিল না । কলকাতায় যেন সবচেয়ে ভাল কাজ নিয়ে ডুবে ছিল সে । দেশ স্বাধীন হলেও তাকে সত্যিই স্বাধীন ও সফল করে তোলা বড় বিপ্লবের ভেতর দিয়ে, দরকার হলে বিপ্লবকে অবিদ শুধরে সফল করে আশে-পাশে নিয়ে অপসা । এখানে এসে বিশ্রাম করছে হরীত, কথা ভেবে নিচ্ছে, সবচেয়ে ছোট-ছোট জিনিসে হাত দিচ্ছে সে । সবচেয়ে প্রথম ছোট জিনিস, নিজের শরীরটিকে সরিয়ে নিতে হবে, মাকে সারিয়ে তোলার চেয়েও বেশি সনির্বন্ধ হয়ে । পরিশ্রমে, অখাদ্যে, রোগে হারীতের শরীর ভেঙে পড়েছিল কলকাতায় । গ্লুরিসি হয়েছিল কয়েকবার। যক্ষ্মী \ΟΟΣ.