পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সময়কেই খসিয়ে নিয়ে এ রকম অমৃত হয়ে বসে থাকবার কী অধিকার অাছে তার । সময় যে বাস্তবিকই একটা ওতপ্রোত নিরবচ্ছিন্ন বাধাবিমুখ বিরাট ঘড়ির আবর্তন, কী অধিকার আছে হারতের—নিজেকে বাদ দিয়ে পৃথিবীর দীন-দুর্বল মানুষগুলোকে সেই অকৃতাৰ্থ সমরোৎসবের ভেতরে ছেড়ে দেবার ? যে-লোকগুলোকে কলকাতায় সে জড়ো করেছিল তার আত্মার সহোদর হিসেবে—কিংবা সং ভাই সৎ বোন হিসেবে হয় তো তার নিজের অগত্মার— বিপ্লবের সেই সব কর্মীরা কী করছে এখন এমন, দুপুরে, তার অভাবে ? জোট পাকাচ্ছে কি তারা আগের মতন এখনো, আলোচনা করছে, কথা ভাবছে, দল বাড়াতে পারছে, ঠিক করতে পারছে কাৰ্যসূচি, নেতার অভাব বোধ করছে, না কি তার ছত্ৰখান হয়ে ভেঙে পড়ছে ? একটা দুটো তিনটে চারটে বালি ইসের মত হরীত নিজেই যখন উড়ে চলে ৭ল জলপাইহাটতে, তখন বাকি হাসগুলো কেমন অদ্ভুত মৃথসংস্কারের বশে ঘুরে উড়ে হারিয়ে যাবে না কেন শূন্যের ভেতর ? হারিয়ে গেছে হয় তো সব । এত দিন বসে যা সে ঠিক-ঠাক করে অনিছিল, কলকাতায় ফিরে গেলে—এক বছর পরে ফিরে যাবার কথা তো তার—সে সবের খড় উড়ছে, মাটি ঝরছে, দেখতে পাবে সে । কোথাও কোনো মানুষ খুঁজে পাবে না । কলকাতায় গিয়ে তা হলে নতুন করে আরম্ভ করতে হবে আবার সব—এক বছর পরে । তাই হোক । হারাতের অনুভূতি মননের দুটে। ধারার যে-দিকটর ওপর নিশীথ সেন ঝোক দিয়েছিল—ও-দিকে হঠাৎ নীল আকাশকে নাকচ করে দিয়ে আরো বড় আশ্চর্য আকাশ, এই দিকে রৌদ্র, ভীমরুল, ক্যানাফুল গাছের ছাদের এই নিটোল মণিকা —দুপুরের ভেতর বসে থেকে প্রকৃতি, ও প্রকৃতির চেয়ে এক তিল বেশি বিশোধিত আরোপিত জিনিসের মতন নগরীর, আবহাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হয়ে, সেই দিকেই বেঁrাক পড়ল হগরীতের । আরো পচিশ-ত্রিশ বছর বঁাচবে হয় তো সে, কিংবা পনের, দশ । বছরগুলো জণবদা খাতায় হাড়ের কালি দিয়ে কালো করে লিখতে-লিখতে মাঝে-মাঝে রক্ত দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে ; এই রকম সব বছর পড়ে আছে হারীতের সামনে । জলপাইহাটির এই একটা বছর শুধু অন্য রকম হবে । যা হচ্ছে এখানে এখন তাই হবে । সাদা মেঘের দিকে তাকাল হারীত, ঘাস, রোদ, ৩২৫