পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ই্যা, হরীত ভাল করে তাকাতে-তাকাতে বললে, “ঐ মেঘগুলো, অমর কথা বলতে-বলতে, এই মাত্র এসে পড়েছে। হ্যা, আছে সূর্য এ দিকেই। খুব জ্বলছে তো অনেকখানি আকাশের মেঘ ।” ‘সূর্য তা হলে পশ্চিমে এসে পড়েছে ? ‘ঠিক পশ্চিমে নয়।’

  • মাথার ওপরও নয় ।”

এই দেড়টা-দুটো বাজালে পশ্চিমে এসে পড়েছে বটে সূর্য, সুলেখা একটু টিটকারি দিয়ে হেসে বললে, ‘আকাশ-ঘড়ি দেখে টাইম বলে দিল বুঝি পাখি ? ‘কে পাখি ? কত পাখিই তো টাইম বলে দেয় দাড়িয়ে থেকে, উড়ে যেতে-যেতে, সূর্যকে চোখ ঠার দিয়ে ।” “কিন্তু হাস যেমন টাইম বলে কেউ আর তা বলতে পারে না ভাবছ বুঝি সুলেখা ? আমি একটা পাখির কথা বলব তোমাকে, সে পাখি–ইস, কিন্তু দময়ন্তীর হাস নয় । কিন্তু দময়স্তীর ইপস যদি বল তাকে, তা হলে বলব সে জুলেখার ইসি, সুলেখার ইসে নয়।’ ‘মানে ? কেমন ভীড়ের মত কথা বলছ তুমি হরিণীত, খুব মনোযোগ দিয়ে হারাতের মুখের দিকে তাকিয়ে হরতের কথার তাৎপর্যট। বুঝে নিতে চেষ্টা করছিল সুলেখা কথা-ভাবা চোখ নিয়ে মশালের আগুনের মত কানযুলগুলোর দিকে তাকাল সে । ‘দময়ন্তী ইসটাকে ভালবেসেছিল বটে, কিন্তু বেশি ভালবেসেছে কণকে ?” ‘যে ইসে নয় তাকে’, ক্যানাফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে থেকে বললে সুলেখা, ‘সব ক্যানাফুলগুলোই লাল কেন, এ রকম মানুষের ছুরি-বসানো মানুষের বুকের রক্তের মত লগল, গত আগস্টের আগের আগস্টের কলকাতার ? তার আগের এক আগস্টের বাংলাদেশের ? কিন্তু এ কী ভাবছে সুলেখা—মানুষের মারাকাটা বোকা রক্তের সঙ্গে এর কখনো তুলনা হয় ? এ বড় ভাল জিনিস, বড় জিনিস, সৃষ্টির নিহিত অর্থের কাছের জিনিস এই লাল, এক দিন মানুষের রক্ত শোধিত হয়ে-হয়ে এই স্থির পবিত্র রূপ পাবে । 'জুলেখাও হাসটাকে দরকারি মনে করে, কিন্তু তবুও ভালবেসেছে কাকে ? ৩২৮