পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘হারীত, অনেক ক্ষণ পরে অর্চনা বললে । “আণর এক বছর কেটে গেল ?’ ‘হ্যা, বাজকুডুল ডাকছে । যেন একশ বছরের ভেতর চলে গেছি আমরা ' রাত আড়াইটায় মহিমবাবু আর তার ছেলে ফিরে এলে, সুমনার খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে, তাকে ঘর-দেণর বন্ধ করতে বলে, অর্চনাকে জানান দিয়ে, বেরিয়ে গেল হরীত সাহাপটির দিকে । টেরই পেল না সুমন, কোথায় চলে যাচ্ছে হরীত । আটটা সাড়ে আটটার সময় ঘুমের থেকে জেগে উঠেছে তো সুমনা, তার পর খেয়েদেয়ে ওষুধ খেয়ে রাত দুটো-আড়াইটে আদি ঘুমিয়ে, একটু জেগে, আবার ঘুম পেয়ে গেছে তার । কী বলছে হরীত, কোথায় যাচ্ছে, ঘুমের চোখে, জ্ঞানচেতনারও কেমন একটা বিহবলতায় বুঝে উঠতে পারছিল না কিছু সুমন । হরীত চলে গেল । অৰ্চনা দুটে দরজা একটা জানালা আটকে দিয়ে, বাতাসের আসা-যাওয়ার জন্য দুটো জানাল খোলা রেখে, চলে গেল । খেয়ে এসে সুমনাদির সঙ্গে সে শোবে । ‘হারীত অণজ রাতে অণর ফিরবে না এই কথাই তো বলে গেল অর্চনা ! বলে গেল না ? জিজ্ঞেস করল সুমনা কেমন যেন অজ্ঞানে অবছায়ায় ডুবে যেতেযেতে । ব্যথা-ভৎসিনা-অচেতনার অন্ধকার আঁকিবুকির ভেতর স্বপ্ন দেখতে লাগল সুমনা ঘুমিয়ে-ঘুমিয়ে—তারপর স্বপ্নেরাও সরে গেল তার মাথা আর রক্তের ভেতর থেকে কেমন একটা জড়িবড়ির মত বহতা ঠাণ্ডার দেশে । এ রকম চার-পাচ রাত কেটে গেল সুমনার, হারীতের, অচনার, তার পর অণরে এক রণত বাইরে-বাইরেই কাটিয়ে দিল হরীত । পর দিন বেলা বণরটণর সময় হগরীত ফিরল । হগরীতের দিকে তাকিয়ে সুমনার মনে হচ্ছিল সারা রাত কড়িকাঠে ফাসিতে ঝুলে, মরে, হেজে, অনেক বেলায় প্রাণ পেয়ে ফিরে এসেছে ছেলেটা । ‘কোথায় ছিলে তুমি সারা রাত ? এতটা বেলা ? ‘খুন করে এসেছি নরেনকে, আশুকে, গনিকে, মোনতাজকে, সুজন থাকে।’ হগরীত হাসতে-হাসতে বললে । ‘খুন করেছিস বেশ করেছিস, চার হাত-পা নিয়ে ফিরেছিস তো বাড়িতে। এখন একটু চান করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।’ “আণগে রান্নাটা সেরে নিই— ૨8