পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জামরুল বনটা দেখা যায় না। তা দেখতে গেলে সুমনার ঘরে যেতে হয়। কিন্তু একটা আশ্চর্য তেপান্তর, বেশ সুন্দর সরবতি লেবুর ঝাড়, চার-পাচটা বৃন্তনিবিড় তালগাছ, দেখা যায় এ ঘর থেকে—অনেক দূরের উচু-উচু গাছগুলো দেখা যায় । একটা অন্যায় করেছেন নিশীথবাবু ’ ‘অন্যায় অনেকগুলো করে ফেলেছেন তিনি, হরীত বললে । ‘তোমার মাকে এ অবস্থায় ফেলে চলে যাওয়া ঠিক হয়-নি তার।’ ‘আমার ওপর ভণর দিয়ে গেছেন ।” ‘ভার দিয়ে গেছেন । কবে ফিরবেন ?’ "তিনি ফেরবণর অণগে তোমরা কলকাতায় চলে যাবে ।” হারীতের কথা শুনে জুলেখার মুখ সংকল্প সক্রিয়তায় ভরে উঠতে লাগল ; সে বললে, “আমরা কলকাতায় যাব কে বলেছে তোমাকে ? আমরা তো মানুষদের এ দেশে থাকতে বলছি । আমাদের কথা শুনছে না, অনেকেই চলে যাচ্ছে । হরীতদা, তুমি ক-দিন থাকছ জলপাইহাটতে ? ‘বাবা বলে গেছেন আগমণকে মণর শ্রাদ্ধশান্তি আবিদ এখানে থাকতে ।” হারতের মুখে না হোক, অন্যদের মুখে এ ধরনের কথা শোনার অভ্যেস আছে জুলেখার । তবুও কথাটা সুবিধের লাগল না তার । এ রকম কথা হরীত না বললেই পারত, ভেবেছিল জুলেখা । নিশীথবাবুকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি, জুলেখা বললে, কিন্তু আমার দুটো নালিশ তার কাছে ? বাইরে তালপাতার দিকে তাকিয়েছিল হরীত, দুটো প্রজাপতি উড়তে-উড়তে সেই সবুজ নীলিমার ভেতরে ঢুকে পড়ছিল প্রায় ; বাতাসের বটকায় কোথায় হুমড়ি খেয়ে পড়ল । ‘হরীতদা, তিনি স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে সত্যিই চলে গেলেন । যার সঙ্গে জীবনের পচিশ-ত্রিশটা বছর কাটল তাকে এ রকম অবস্থায় ফেলে চলে যায় বটে কেউকেউ, কিন্তু—চলে গেলেন প্রফেসরের মতন মানুষও । এটা কি তার অপরাধ, এ দেশের অপরাধ, না কি এ যুগেরই—ঠিক বুঝতে পারছি না অামি । ঢের রক্ত, গ্লানি, বিশৃঙ্খলায় ভরে আছে এ যুগ, এ যুগে প্রফেসর সেনের মতন ও-রকম মানুষকেও হয়তো তাই এই রকম হতে হয় ।” \©ማ¢