পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-লেখেন একথা প্রমথদণকে কেন সে জানায় নি ? বিশেষ কোনো বাধায় নয় নিশ্চয়ই, খেয়াল হয় নি বলে, মনেই ছিল না বলে, শুভেন্দুর পরিচয় বা চিঠিপত্র মনে করে রাখবার মত কোনো প্রয়োজন কল্যাণী বোধ করে নি বলে । নিরপরাধ নিশ্চিন্ততায় প্রমথর দিকে তাকাচ্ছে কল্যাণী । প্রমথ বুঝছে, এই মেয়েটির প্রতিটি মুখের ভাব, চোখের দৃষ্টির মানে সে জানে, সাত-আট বছর ধরে একে কেটে-ছি*ড়ে, এর সম্বন্ধে আগজ সম্পূর্ণ বিশেষজ্ঞতায় পৌছে গেছে সে । শুভেন্দুর সঙ্গে কল্যাণীর উড়ো পরিচয় মাত্র, উড়ো চিঠির ব্যবহার মাত্র, কল্যাণী আজও প্রমথেরই জিনিস—বুঝতে দিচ্ছে মেয়েটি । প্রমথ পরিতৃপ্ত হচ্ছে । কিন্তু কেন এ কামনা আজও ? কেনই বা এ চিন্তাহীন পরিতৃপ্তি ? চার দিকে বিয়ে বাড়ির হুলুস্কুল, মানুষেরা আজ স্কুল জিনিস ছাড়া অন্য কোনো কিছু উপভোগ করবার কোনো রুচিও বোধ করছে না, অবসরও না ; সে সবের প্রয়োজনও নেই তাদের ; দু-তিন সপ্তাহের ভেতরেই প্রমথের বধু হয়ে যেমেয়েটি এই বাড়িতে পা দেবে—এবং সমস্ত জীবন ভরে সমাধানের সার্থকতায়, সমস্যার প্রয়োজনীয়তায় ব্যাপৃত করে রাখবে তাকে, সেই সুপ্রভা, আজই হয় তো, এখনই, এক দিনের স্টিমার ট্রেনের পথের ওপারে কেমন একটা পুলক নিয়ে প্রমথের জন্য অপেক্ষা করছে । কিন্তু এই সব কিছুই প্রমথ ভাবতে যাচ্ছে না কেন ? জীবনের যেন কোনো দায়িত্ব নেই তার । কল্যাণী যখন আসতে চাইল এখানে, কেন তাকে নিষেধ করে চিঠি দিতে পারল না প্রমথ ? মেয়েটিকে কেন এখানে সে ডেকে আনিল ? প্রমথের জীবনের জন্য এ তো নয়, কল্যাণী তাকে খুবই ভালোবাসে বটে কিন্তু তবুও সামাজিক বিধি-ব্যবস্থাকে প্রমথ অনেকবার উপেক্ষা করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত কল্যাণী একবারও সাহস পেল না, কেন পেল না ? তেমন প্রেম এই মেয়েটির ছিল না বলেই হয় তো ; কিংবা প্রেম, সে প্রেমও হয় তো ছিল, কিন্তু পৃথিবীর সামান্য উপকরণ নিয়ে পদে-পদে জীবনের তাড়া খেতে-খেতে দুটো প্রাণীকে অচিরে উচ্ছন্ন যাবার ভয়াবহ স্বপ্ন কল্যাণীকে হয় তো থামিয়ে SOS)