পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আপনি জেগে উঠেছেন ? উনি আপনাকে ওপরে আসতে বলেছেন । কোথায় কোন সিড়ির ওপর থেকে কে যেন কথা বলছে । জিনিসটা স্বপ্নের না বাস্তবের তা নিয়ে প্রশ্ন করার মত মনের অবস্থা ছিল না নিশীথের । ঘুম ভাঙে নি তার, স্বপ্ন দেখছে সে, স্বপ্ন যে দেখছে সেটা টের পাচ্ছে, টের পেতেপেতে ঘুম পাতলা হয়ে আসতেই সিড়ির কিনগর থেকে কে যেন অশবেদন জানাচ্ছে—হয় তো সত্যি পৃথিবীর দেশ থেকে—হয় তো স্বপ্নের নীড় অনীড়ের কুয়াশা থেকে ঠিক করে উপলব্ধি করে নিতে না-নিতেই ঘুমিয়ে পড়ছে নিশীথ আবার । ঘুম বেশ গাঢ় হয়ে গেছে ঃ জমানো বরফের অণরো নীচে যে-বরফ জমেছিল গত বছরের শীতে, যে-বরফের মার নেই, যার জন্য দিন নেই, রাত্রির অবসান নেই—তেমনি ভাবে । বরফে ভাঙন দেখা দিচ্ছে, আবার চিড় খাচ্ছে, নড়-নড করে উঠছে চাঙড় । গুড়ি-গুডি বরফের ফোয়ারা ছিটকে পড়ছে, মুখে এসে পড়ছে এপ্রিলের নীল, কোকিল নীলকণ্ঠ, পিউ কাহা তড়পানো আকাশ—বড রোদ, মেজো রোদ, ছোট-ছোট ফুটকির রোদ. ঘুম ভাঙলে আপনি ওপরে চলে আসুন—একেবারে সিড়ির নীচের ধাপ থেকে কে যেন বলছে নিশীথকে । গ। ঝগড়া দিয়ে জেগে গেল প্রায়—জেগে-জেগে—ঘুমোতে-ঘুমেণতে জেগে উঠল নিশীথ । বাস্তবিকই জেগে উঠল আগবণর । বেশ খোলা গলায় বড় শবদ তার কানে এসে পৌঁছেছিল—এই তো এখুনি—মিনিট দুই আগে ? নিশীথকে ওপরে যেতে বলেছে । ডেকেছে মিসেস দাশগুপ্ত তা হলে । নিশীথ উঠে মশারি গুটিয়ে বিছানা ঝেড়ে সাজিয়ে এক-অণধ মুহূর্ত দাড়িয়ে রইল খাটের কাছে । চারিদিকে নিস্তব্ধতা, কোথাও কথা বলেছে, কাউকে আহবান করেছে কোনদিনও মনেই হয় না । কেউ যেন নেই এ বাড়িতে । ঐ পেয়ার গাছের ডালপালা পাতা রোদের ফঁাকে যে-কয়টা চড়ুই বঁণপার্কাপি করে ধ্বনির ফোয়ারা ফেনা ছুড়ে মারছে অনর্গল, এ ছাড়া এ বাড়িতে কোনো প্রাণী অাছে বলে মনেই করতে পারছে না নিশীথ । কিন্তু তবুও মানুষের সম্পূর্ণ স্পষ্ট ভাষার মত এখুনি কে যেন ডেকে গেল নিশীথকে – কণনে লেগে অাছে—রক্তের বিমের ভিতর ঘুম ভাঙলে আপনি ওপরের কেমন একটা স্ফটিক নির্মলদোণতনা নিঃশব্দে সংক্রমিত হয়ে আছে । একতলার গোশলখানা ঢুকে, হাত-পা-মুখ ধুয়ে, কী ভেবে চান করে নিল, পরিষ্কার কাপড়জামা পরে নিশীথ ২৯