পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কলকাতার বাস কণ্ডাকটর কলকাতার বাঙালি প্যাসেঞ্জণরদের । কেটে কুচিয়ে নুন বরফে চালান দেবার মতলব আর-কি। একটা বিহিত করতে বলছিলেন । সেই থেকে কথাটা ভাবছি অগমি ।’ নিশীথ কাটা চামচ দিয়ে ডালভাত খাচ্ছিল । চামচট। রেখে ছুরি তুলে নিল, কাটা দিয়ে মাছের ফ্রাইট তুলে নিয়ে বললে, ‘মনে করে রেখেছেন। অনেকে ভুলে যায় । কিন্তু ওটা তো আমাদের একটা ছোটখাট আপদ । বড়-বড় বিপদগুলো পড়ে রয়েছে ।” ‘ছোটখাট ? অণজ মোটরে ঘুরেছি ঘণ্টাখানেক নানা জায়গায় । দেখেছি বাসগুলো খুব ভাল করে নজর দিয়ে । এ যদি ছোটখাট ছি’চকে হয়, তা হলে আমি নাচার নিশীথবাবু । নিশীথের খিদে নেই বেশি অণজ ? কী খাবে ? মাংস খাবে ? "এ কি ন লি ইসের মাংস মিসেস দশগুপ্ত ?’ ‘না । ঘুঘুর ; খেতে ইচ্ছে করছে না ? আপনি মাংস খান না ? অণচ্ছা! দেখুন আজ খেয়ে— নিশীথ দেখতে লাগল খেয়ে । রান্না ভাল, মাংস নরম মাখনের মত ; স্বাদ আছে । কিন্তু এ জন্যে পাখিটাকে মারা কি ঠিক হয়েছে ? একটা কি দুটো ঘুঘুকে মেরে এই মাংস—এই ডিশ—এই রক্তের ফল ঝলসানি খেয়ে তৃপ্তি । এরপর মানুষের জীবনের ছোট-বড় নানারকম অতৃপ্তির কথা পেড়ে নমিতার মুখের দিকে চেয়ে থেকে কেমন যেন অবাস্তবতা এসে পড়ে। মাংস খাচ্ছে নমিতাও । সেও কি এই রকম কথাই ভাবছে ? নিশীথ একটু ব্যাহত হয়ে তাকিয়ে দেখল মাংস খেয়ে নমিতার মুখে যে-তৃপ্তি সেটা আশ্চর্যরকমে সৎ । নমিতা মৃত ঘুঘুর কথা ভাবছে না ; মাংসট নির্বিক রিভাবে ভোগ করছে । বাস কনডাকটর ও প্যাসেঞ্জারদের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সে খুব নিখুত লোকায়ত । আপনাদের বড়-বড় বিপদগুলো কী বলবেন নিশীথবাবু ? ‘আগর-এক সময় ব-ব ।’ ঘু জনেই খেয়ে চলছিল নিঃশব্দে–কাট চামচ খটখট করে, কাট ছুরি ঘুরিয়ে কিছুক্ষণ । ‘কাল রাতে আপনার ঘুম হয়েছিল নিশীথবাৰু ?