পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনেক যুদ্ধ করেছে জীবনে নিশীথ, কোনো যুদ্ধেই জয়ী হতে পারে নি। এখন আর লড়াইয়ে জেতবার অাশা নেই তার । অণস্থা শেষবারের মতো লড়ে দেখা যাক, এবার না-জিতে ছাড়াছাড়ি নেই । এ রকম কোনো সংকল্প উৎসাহ এখন নিশীথের হৃদয়ে নেই আর । কিন্তু স্বাভাবিক প্রাণোচ্ছাস রয়েছে ; তা রয়েছে, সুযোগ পেলেই উপচে উঠতে চায়। নিশীথ সুমনার কাছে থেকে স্বঙর চেয়ে নিল ; রানুর জন্যে কেনা হয়েছিল, রানু যখন ন-দশ বছরের। রানুর বৃঙর কোনো রকমে জোড়াতাড়া দিয়ে পায়ে এ’টে নিয়ে নিশীথ -কলকাতার এম্পায়ারে কী এক রাবণমৃত্য দেখেছিল এক-সময়, তেমনি দুর্দমনীয় ভাবে নাচতে-নাচতে বললে ঃ ‘সুমন, যবে বিবাহে চলিলা বিলোচন । ‘কে, বিলোচন কে ? বিলোচন কে । নিশ্চয় দাশগুপ্ত সাহেব ! তাই না ? যবে বিবাহে চলিলা বিলোচন—দেবে না দেবে না যবে বিবাহে— বিবাহে—চলিলা'...দ্রুম দ্রুম—চোখ ঘুরিয়ে বাবরি উড়িয়ে রাবণনুত্যে বাসুকির মাথা না থে*ৎলে ছাড়ছিল না নিশীথ ; কলেজের ফিলজফির প্রফেসর মহিম ঘোষাল এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন । মহিমবাবুর সঙ্গে কথা সেরে এসে জরজ বন্ধ করে আবার নাচতে লাগল নিশীথ । সুমনাকে আচ্ছন্ন হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তে দেখে নাচ থামাল । বললে, ‘পারনিসাস এনিমিয়ার রুগি । এদের সঙ্গে ঘর করে মজাও করতে পারা যায় না একটু । “মজা কলকাতায় গিয়ে কুরো, দাশগুপ্ত সাহেবের বৌয়ের কাছে । তোমার এ-রকম নাচ দেখলে আমার মাথা যেন কেমন করে ওঠে ।” “কেমন আছে শরীরটা অণজ ?

  • বড় খারাপ লাগছে।’

"খারাপ !’

  • খারাপ । মনে হচ্ছে যেন মরে যেতে বাকি নেই বেশি— নিশীথের হাত ধরে সুমন। তাকে নিজের বিছানার পাশে টেনে বসাল। খুব অনিচ্ছার সঙ্গে বসল নিশীথ । অনিচ্ছাটাকে অতর্কভাবে চেপে রেখেছে ঠিক—কিন্তু তবুও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়ে স্বামীকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝে নিতে পারে কোনো-কোনো স্ত্রী। সুন্দর ছিল বটে সুমনা একদিন–কিন্তু কেমন হাড়ফ্যাকাসে রঙ হয়ে গেছে—শরীরে হাড়গোড় ছাড়া কিছু নেই আজ তার । নিশীথ পণ্ডিত লোক, কিন্তু তবুও বিলাসী মানুষ, দেহরসিক আরো বেশি।

સ્વાઝ0