পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধরে ফেলেছে কি ? গোরু দেখার ছলে সারাৎসার কৌতুকে মাঝে-মাঝে অৰ্চিতার দিকে তাকায় নিশীথ—আহা, জলপাইহাটির এ একটা কী রকম চমৎকার ফলসগনির জিনিস ছিল । অথচ বণর মাস এ দেশের অণকাশ-বাতাস নদী-নক্ষত্র, কলেজের কাজ, কথাবার্তা বাড়িতে। ফিরে এসে সুমনা রানু ভানুর সঙ্গে আলিপাচারি, তারপরে ইংরেজি-ফরাসি বই-নভেল নিয়ে ডেকচেয়ারে পড়ে থাকার সঙ্গে নিখুঁতভাবে বিমিশ্রিত হয়ে । ক অপরূপা, কী অপরূপ গভীর ছিল সব—একই অন্তঃসারের, তবু অনেক । বর্ণালির বারমাসের সব ; নিরবচ্ছিন্ন । সারাৎসার । একে একে ছি*ড়ে গেল সব । শুকিয়ে গেল, ফুরিয়ে গেল । নিশীথ ইচ্ছে করেই ঘটিয়েছে কি সব ? না, ইতিহাস ঘটিয়েছে ? সময়ের হাতে আঁকিবুকি, অবোলা বাতাস, ধুলোর গুড়ো—নিশীথ আর তার পরিবার —সকলের পরিবার সমস্ত ব্যক্তির । সমস্ত পৃথিবীর । কিন্তু তবুও নিজে যতটা সে লুষ্ঠিত হয়েছে, নিমূল হয়েছে, আবর্তিতপরিবর্তিত হয়েছে, মহিম-অর্চি তাদের, বা কলেজের বা বাইরের অন্য সব নরনারীদের বেলা সময় ততখানি অশ্লীল অস্থিরপনায় সক্রিয় হয়ে ওঠে নি । এখনো যেন আট-দশ বছর আগের পৃথিবীতে পড়ে আছে মহিম ; সেই যুদ্ধের আগের জলপাইহাটটাকে খুঁজে বার করে ঢেলে সাজাচ্ছে অৰ্চিতা । সাজাবারও দরকার নেই ; কেjনো প্রয়াসের প্রয়োজন নেই যেন, নেই কোনো উদ্ভাবনা, এমনিই হয়ে যাচ্ছে সব । নিজে নিশীথ এদের মতন অচেতন থাকলেই তো পারত । কেন দেখতে, বুঝতে, অনুভব করে নিতে গেল । সময়ের আঙুলের নির্দেশে সেই বিম্বিসারের থেকে আজকের স্ট্যালিন-টু-ম্যানের কবলিত মানুষদের মত পথ থেকে পথান্তরে স্ফুরিত, বিবর্তিত, নত, নিহত হতে রাজি হয়ে গেল সে—ধা নেই, সেই অমৃতের নিরবচ্ছিন্ন বধিরতার বিনিময়ে, ব্যক্তিকে বিক্রি করে, অচেতন অন্ধকার সময়কে মর্যাদা দেবার জন্যে । ‘তুমি দাড়িয়ে আছে। অর্চিতা এখনে। চলে গেছ ভেবেছিলুম। ‘কী যেন ভাবছিলে তুমি । ‘খুব লক্ষ্ম। মানুষ তুমি’—নিশীথ বললে, ‘আমি কলকাতায় চললুম, সুমনাকে দেখো তুমি আর মহিম। হারাত যদি আসে”—থেমে গেল নিশীথ । ԳՏ