পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোথেকে—হয় তো অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়েছে—একটা আফিমের গুলির মত পুটুলিতে এক মাইল কাগজ আঁটে—তাইতে আপনাদের বি-এ এগজগমিনে দরকারি যত শাস্ত্র বেঁটিয়ে লিখে নিল—ধরতে পেরেছিলেন অণপনারা ?? নিশীথ অভিনিবিষ্ট হয়ে শুনছিল, জানাশোনা কথা তো সব ; যে-ছেলেরা বছরের পর বছর পরীক্ষা দেয়, বাইশ-চব্বিশ বছর ধরে তাদের তো ঘাটিয়ে আসছে নিশীথ, তবুও একেবারে হালে যে-রকম রকমারি বাড়ছে ছেলেদের । ‘তারপরে ঘণ্টায় একশ বণর করে জল খেতে অণর ফেলতে বাইরে গিয়ে নোট আর তোতাপুরী ছুটিয়ে জয়হিন্দ বলে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ত—কী করতে পেরেছিলেন অণপনার । পরীক্ষার সময়ে গার্ড দিয়েছিলেন তো এদের বডিগার্ড হিসেবে ।’ কালুবাবু নলটা মুখে নিতে গিয়ে সরিয়ে রেখে বললে, “আমাকেও গার্ড দিতে হয়েছিল অ}পনাদের কলেজের বি-এ পরীক্ষায় । আপনাদের প্রিন্সিপাল লিখে পাঠালেন, আসুন একটু পাবলিক সার্ভিস করে যান। টাকা দিতে পারব না । কিন্তু, মিষ্টি খেতে দেব রোজকার ইনভিজিলেশনের পারিশ্রমিক হিসেবে। ওকালতি করে খাই, আজকাল মন্দা পড়ে এসেছে, ভাবলুম যাই-ই, একটু পাবলিক সার্ভিস করে আসি গে। যে-রুমে বরেন পরীক্ষণ দিচ্ছিল সেখানেই গার্ড দেবার জন্যে ফেললে আগমণকে । মিনিট পচিশেক পায়চারি করে দেখছিলুম। দেখলুম, সকলেই টুকছে, সকলেই গাট কাটছে, আমাকে দেখে চক্ষুলজ্জার খাতিরে বরেন সুবিধা করতে পারছে না। তবে হ্যা, নখগুলো বার করে দেখছে, ঢাকাই মসলিনও মাঝে মাঝে বেরুচ্ছে ।" ‘কী করলেন আপনি ? ‘কী আগর করব । এক ছেগয়ে দশ-বারোটা ছেলেকে বার করে দিতে হয় । এদের তাড়িয়ে দিলে বরেনকে বাদ দেওয়া চলে না । ঘরের বারান্দার দিকে দরজার কাছে বেয়ারাকে বললুম চেয়ারটা রেখে দিতে । খবরের কাগজে মুখ ঢেকে চেয়ারে গিয়ে বসলুম'—নিশীথ বিষন্ন নিস্তব্ধভাবে কালুবাবুর চোখের নাকের আদলে পরিস্ফুট রোগ রে ঝর চিলের দিকে তাকিয়ে রইল । ষা বল্লেন কালুবাবু নিশীথ জানে সব । জেনে-জেনে এত ঘাগি হয়ে গেছে যে -কালুবাবুকেই দেখছিল নিশীথ, তার কথাগুলোকে ততটা আর নয় ।