পাতা:জীবনীকোষ-ভারতীয় ঐতিহাসিক-দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৩
ভারতীয়-ঐতিহাসিক
কবীর
ছিল। তিনি রামানন্দের নিকট নূতন সংস্কারমূলক ধর্ম্ম লাভ করেন। সকল প্রকার কুসংস্কারের বিরুদ্ধেই তিনি সংগ্রাম ঘোষণা করেন। এসম্বন্ধে হিন্দু, মুসলমান কাহাকেও তিনি ক্ষমা করেন নাই। সকল সম্প্রদায়ের লোকই তাঁহার সরল-নির্ভীক ধর্ম্মভাবে মুগ্ধ হইয়া, তাঁহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এসম্বন্ধে তাঁহার উপর নির্য্যাতন ও কম হয় নাই। সম্রাট সেকেন্দর লোদি (১৪৮৮-১৫১৭ খ্রীঃ) তাঁহাকে ১৪৯৫ খ্রীঃ অব্দে আহ্বান করেন কিন্তু তাঁহার উচ্চ ধর্ম্মভাব দর্শনে মুগ্ধ হইয়া তাঁহার উপহার অত্যাচার করিতে বিরত হন। জাতিভেদ, পৌত্তলিকতা, তীর্থ, ব্রত, মালা, তিলক, মর্কট বৈরাগ্য প্রভৃতি সকল প্রকার কুসংস্কারের মূলেই তিনি প্রচণ্ড আঘাত করিয়ছিলেন। তিনি সাধক হইয়াও বিবাহ করিয়া ছিলেন। তাঁহার স্ত্রীর নাম ছিল লোই। তাঁহার কমাল নামে এক পুত্র ও কমালী নামে এক কন্যা জন্মে। কমলীর সঙ্গে এক ব্রাহ্মণ যুবকের বিবাহ হয়। কমলও একজন উচ্চদরের সাধক ছিলেন। কবীরের মৃত্যুর পরে অনেকে তাঁহাকে একটী সম্প্রদায় গঠন করিতে বলেন। কিন্তু তাঁহার পিতা কোন প্রকার সম্প্রদায় গঠনেরই বিরোধী ছিলেন বলিয়া, তিনি এই প্রকার দল গঠন করিয়া পিতার আচরিত মতের
বিরোধী হইতে অনিচ্ছা জ্ঞাপন করেন। কবীরের মৃত্যুর পরে তাঁহার হিন্দু শিষ্যেরা নানা প্রকার কৌশলজাল বিস্তর করিয়া তাঁহাকে হিন্দু বলিয়া প্রচার করিতে চেষ্টা করিয়ছিলেন। এসম্বন্ধে ভক্তমাল গ্রন্থকার ও তাহার টীকাকারেরা প্রসিদ্ধ।

 যদিও কবীর সম্প্রদায় গঠনের অতিশয় বিরোধী ছিলেন, তথাপি তাঁহার, মৃত্যুর পরেই তাঁহার অনুবর্ত্তীরা দুইটী দলে বিভক্ত হইয়া পড়িলেন। কবীরের বাণী সংগ্রহ করিয়া ‘বীজক’ নামক গ্রন্থ রচিত হইল। সুরতগোপাল নামক তাঁহার এক শিষ্য ইহা লইয়া কাশীতে কেন্দ্র স্থাপন করেন। তাঁহারা ক্রমে ক্রমে হিন্দু শাস্ত্র ও বেদান্তের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িলেন। বাঘেলখণ্ডের রাজা বিশ্বনাথ সিংহজী এই বীজকের এক উৎকৃষ্ট টীকা লিখিয়াছেন। ইহা ‘বঘেলখণ্ডী টাকা’ নামে প্রসিদ্ধ। কবীরের বণিজাতীয় শিষ্য ধর্ম্মদাসজী ছত্রিশগড়ে আর একটী শাখা প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি স্বীয় গুরুর ন্যায় বিবাহিত ছিলেন। এই ধারার গুরুরা বরাবরই বিবাহিত। কবীরের অপর শিষ্য বিজলী খাঁ তাঁহার মৃত্যুস্থান মগহরে (বস্তী জিলা) একটি মসজিদ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার স্মৃতি রক্ষা করিয়াছিলেন।

 কবীরপন্থী দ্বারা হিন্দী ভাষারও বহুল প্রচার ও উন্নতি হইয়ছিল। কারণ